ঢাকা: প্রায় দেড় কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস ঢাকা নগরীতে। হাজারো সমস্যায় জর্জরিত এ নগরী।
পথচারী ও ভাসমান এসব মানুষের জন্য নেই পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা। ফলে দেয়ালের পাশে এবং উন্মুক্ত স্থানে চলে মলমুত্র ত্যাগ। আর এ দুর্গন্ধের মাঝেই চলাফেরা করতে হয় পথচারীদের।
নগরবাসীকে এ দুর্গন্ধ, অস্বাস্থ্যকর ও অস্বস্তিকর পরিবেশ থেকে পরিত্রাণ দিতে উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এরেই অংশ হিসেবে নগরবাসীকে স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশনের আওতায় আনতে আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি। ইতোমধ্যে আভিজাত্যের ছোঁয়া দিয়ে উত্তর সিটিতে নির্মাণ করা হয়েছে কয়েকটি পাবলিক টয়লেট।
তবে, নগরবাসীকে নোংরা অস্বাস্থ্যকর টয়লেট থেকে পরিত্রাণ দিতে আধুনিক টয়লেট নির্মাণের এ উদ্যোগ জায়গার অভাবে অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। কারণ, টয়লেট নির্মাণের জন্য যে স্থানগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে, সেসব স্থানে উপযুক্ত স্পেস পাচ্ছে না সিটি করপোরেশন।
এছাড়া, ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা হওয়ায় জমির মালিকরা জায়গা ছাড়ছে না। এতে আধুনিক টয়লেট নির্মাণে করপোরেশনকে নির্ভর করতে হচ্ছে সরকারি অ্যাজেন্সির জমির ওপর। এতে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দীর্ঘায়িত হবে বলে অভাস পাওয়া যাচ্ছে।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটিতে গাবতলী, তেজগাঁও, নাবিস্কো, মহাখালী, ফার্মগেট, মিরপুর চিড়িয়াখানা ও রামপুরাসহ এখন পযর্ন্ত ১০টি আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলো জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্তও করা হয়েছে। এছাড়া গুলশান-২, এলেনবাড়ি, মিরপুর রাইনখোলা, উত্তরাসহ বিভিন্নস্থানে আরও ১০টি নির্মাণাধীন রয়েছে। যা অতিদ্রুত মানুষের ব্যবহার উপযোগী করা হবে।
ডিএনসিসির তত্ত্বাবধানে ওয়াটার এইড বাংলাদেশের সহযোগিতায় এবং এইচ অ্যান্ড এম ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে টয়লেটগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে।
কোরিয়ান ওয়ার্ল্ড টয়লেট অ্যাসোশিয়েশনের সহায়তায় একটি আধুনিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। চারটি ডিএনসিসির নিজস্ব তহবিলে নির্মাণ করা হবে, যার টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন।
এছাড়া সরকারের সহযোগিতায় ‘আপগ্রেশন অ্যান্ড রিজেনারেশন আরবান ওপেন স্পেসেস’ প্রকল্পের অধীনে আরও ৭৩টি আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। কিছুদিনের মধ্যে এ প্রকল্পটি অনুমোদন করা হবে বলেও ডিএনসিসি সূত্র জানায়।
তবে, এতো সব পরিকল্পনার মধ্যে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জায়গা সংকট।
এ বিষয়ে ডিএনসিসি'র পরিবেশ জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারিক বিন ইউসুফ বাংলানিউজের কাছে তীব্র জায়গা সংকটের বিষয়টি স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘মেকিং পাবলিক টয়লেট ওয়াচ’ এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে নগরীতে আধুনিক টয়লেট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টয়লেটগুলো ব্যবহারীদের চার্চ মানি দিয়ে মেইনটেন্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ কারণে, যেখানে ইউজার বেশি, সেখানে টয়লেটগুলো নির্মাণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা জায়গা নিয়ে বড় চ্যালেঞ্জর মুখোমুখি হতে হচ্ছে। টয়লেট নির্মাণের জমি পাওয়াই যাচ্ছে না। এখন যেখানে সরকারি জমি আছে, যোগাযোগ করে জায়গা সংকট উত্তরণের চেষ্টা করছি।
স্থান সংকট এড়িয়ে কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্থান সংকটের কারণে সিএনজি স্টেশন ও পেট্রোল পাম্প মালিকদের সঙ্গে কথা বলে আধুনিক পাবলিক টয়লেট নিমার্ণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। রামপুরায় একটা সিএনজি স্টেশনে টয়লেট নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে।
এদিকে নতুন বাজার, মোহাম্মাদপুর বাস স্ট্যান্ড, মিরপুর- ১০,বাড্ডা লিং রোডসহ কয়েকটি স্থানে প্রচণ্ড চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এখন পযর্ন্ত জায়গার অভাবে আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানান এ প্রকৌশলী।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৬
এমসি/ওএইচ/বিএস