ঢাকা: রোহিঙ্গা একটি রাজনৈতিক সমস্যা। তাই মানবিক বিষয় নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো এর সমাধান দিতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক উইলিয়াম লেইসি সুইং।
রোববার (১১ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকায় শুরু হওয়া অভিবাসন বিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিএফএমডি) সম্মেলন উপলক্ষে ঢাকায় এসেছেন লেইসি সুইং।
এ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি কক্সবাজার সফরে যাওয়ার কথা ছিলো তার। যেখানে মায়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছেন। তবে শেষ মুহূর্তে সেটি বাতিল হয়েছে। সোমবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা ছাড়বেন তিনি।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার একটি রাজনৈতিক দিক রয়েছে। এর জন্য বাংলাদেশ ও মায়ানমার দু’দেশকেই কাজ করতে হবে। এর সঙ্গে আরও কিছু দেশের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলেও আমি জানি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কতো সেটা এদেশের সরকার বলতে পারবে। তবে এ সংখ্যা যাই হোক না কেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা মায়ানমার ও বাংলাদেশের কক্সবাজার এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত অনিবন্ধিত মায়ানমারের নাগরিকদের সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে আমরা কাজ করছি।
সুইং বলেন, অভিবাসন ব্যয় শূন্যে নামাতে হবে। অভিবাসীদের যাতায়াত খরচ কোনোভাবেই তাদের কাছ থেকে নয় বরং নিয়োগদাতা ব্যক্তি বা কোম্পানিকে পরিশোধ করতে হবে।
অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক অবৈধ ও দুর্নীতিপরায়ণ নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা শ্রমিকদের আমৃত্যু দাসত্বের পথে নিয়ে যায়। একজন অভিবাসীর দুই বছরের আয় রিক্রুটিং এজেন্সির পকেটে চলে যেতে দেখা যায়। অথচ অভিবাসী ওই শ্রমিকের কোনো খরচই দেওয়া উচিত নয়। এই খরচ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, যাদের জন্য অভিবাসী শ্রমিক কাজ করবেন, সেই প্রতিষ্ঠানেরই বহন করা উচিত।
প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) দেশে পাঠানোর খরচ কমানোর বিষয়ে আইওএমের মহাপরিচালক বলেন, একজন প্রবাসীকে তার কষ্টার্জিত অর্থ দেশে পাঠাতে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত খরচ করতে হয়। এই হার কমানো উচিত। রেমিট্যান্সের খরচ ৫ থেকে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য আইওএম কাজ করছে।
এ ছাড়া অভিবাসীদের নিরাপত্তা দেওয়া, তাদের অধিকার রক্ষা ও যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করার জন্য গ্লোবাল কমপ্যাক্টের আওতায় শ্রমশক্তি রপ্তানিকারক দেশগুলোকে একটি আইনগত বাধ্যবাধকতার আওতায় আনার কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব এমপ্লয়ার্সের সঙ্গে একটি যৌথ প্রকল্পের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ল্যাসি সুইং বলেন, এর মাধ্যমে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি মানদণ্ড ও আচরণবিধি নির্ধারণ করা হবে। যারা এটা মানবে তারা টিকে থাকবে, যারা মানবে না তারা ব্যবসা করতে পারবে না।
প্রবাসে অভিবাসীদের মানবাধিকার পরিস্থিতির নিয়ে লেইসি সুইং বলেন, গত এক বছরে কেবল ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে চোরাচালানি অথবা মানব পাচারকারীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৪ হাজার ৬৯০ জন অভিবাসী। তবে সারা বিশ্বে এই পরিমাণ আরও অনেক বেশি। অভিবাসনের ক্ষেত্রে এই যে চড়া মূল্য, এর দিকেও দৃষ্টি দেওয়া উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৬
জেপি/এসএনএস