বগুড়া: বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা। শহর থেকে বগুড়া-শেরপুর সড়ক ধরে কিছু দূর সামনে এগুলে কলোনি।
আগুনে পুড়িয়ে তেলে ভাজা হচ্ছে চাপ ও কাবাব। সঙ্গে রয়েছে পুরি। এসব খাবার চারিদিকে ছড়াচ্ছে মন মাতানো পাগল করা ঘ্রাণ। খাবার আগেই জিভে জল এনে দেয় তৈরিকৃত সেই চাপ আর কাবাব।
প্রতিদিন বিকেল থেকে শুরু হয় বেচাবিক্রির প্রস্তুতি। রাস্তার পাশ দিয়ে সারিবদ্ধভাবে দোকানগুলো বসানো হয়। সামনে দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয় পর্যাপ্ত সংখ্যক বসার চেয়ার।
অনেকের নিজস্ব দোকান ঘরও রয়েছে। সেগুলোর ভেতরে রয়েছে বসার ব্যবস্থা। তবু শেষমেষ সুস্বাদু চাপ-কাবাবের স্বাদ নিতে ক্রেতাদের বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। এ কর্মযজ্ঞ চলে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত।
শহরের কলোনি এলাকায় পাঁচটির মত চাপের দোকান রয়েছে। দোকানগুলো রাস্তা লাগোয়া। ভেতরের গাদাগাদি করে বসেছেন মাংসের চাপ খেতে আসা মানুষজন। বাইরের দৃশ্যটিও দেখার মত।
কারণ ভেতরের তিনগুণ বেশি মানুষ বাইরে দাঁড়িয়ে। তাদের সামনেই কারিগররা চাপ ও চিকেন ফ্রাই তৈরি করছেন। পাশাপাশি পুরি তৈরি হচ্ছে। ক্রেতার অর্ডার পূরণে কর্মচারীরা এপাশ থেকে ওপাশে ছোটাছুটি করছেন।
কথা হয় চাপ ও কাবাব খেতে আসা গোলাম মোস্তাফা, জাহাঙ্গীর আলম, মিলন হোসেন, আরিফ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে।
তারা বলেন, ভাজিপুরি খেলে পেটে জ্বালাপোড়া হয়। এ জন্য ওষুধও খেতে হয়। কিন্ত এসব খাবার থেকে তো মুখ ফিরিয়ে রাখা যায় না। লোভ সামলানো বড়ই কঠিন। চাপ-কাবাবের নাম শুনলেই জিভে জল এসে যায়।
‘তাই আর কি করার। হোন্ডা চালিয়ে অনেক দূর থেকে এসব খেতে শহরে এসেছি’ যোগ করেন এসব ব্যক্তিরা।
চাপ ব্যবসায়ী মাহবুব আলম বাংলানিউজকে জানান, তিনি বিহারি সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রায় সাত বছর ধরে চাপ তৈরির ব্যবসা করে আসছেন। শুরু থেকেই তিনি গরুর মাংসের চাপ, চিকেন ফ্রাই ও পুরি তৈরি করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন আইটেমের সালাদ থাকে। নিজেই ছিলেন কারিগর। তবে বর্তমানে তিনি অসুস্থ।
তিনি জানান, বছর দেড়েক আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে ঠিকমত চলাফেরা করতে পারেন না। সেই থেকে কারিগর দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। তিনি দোকানে বসে পুরো ব্যবসা দেখভাল করেন।
বর্তমানে তার দোকানে ১১জন কর্মচারী রয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন কারিগর। প্রতি পিছ চাপ ৩৫ টাকা, দেড় কেজি ওজনের মুরগির চিকেন ফ্রাই ৩০০ টাকা এবং প্রতি পিছ পুরি ৫ টাকায় বিক্রি করা হয়।
কলোনির পাশাপাশি শহরের সাতমাথায় জিলা স্কুল প্রাচীর সংলগ্ন রাস্তার পাশ দিয়ে বসে কাবাবের সারিসারি দোকান। কাবাবের জন্য মাংস প্রস্তুত করে শিকে ভরানো হয়। এরপর তা চুলায় বসিয়ে বাতাস দেওয়া হয়। চুলা থেকে আগুনের লাল শিখা বের হতে থাকে। সৃষ্টি হয় হালকা ধোঁয়ার।
এভাবে আগুনে পুড়তে থাকে মাংস। কিছু সময় পর শিকগুলো চুলা থেকে নামানো হয়। এরপর তাতে রকমারি মসলা ছিটিয়ে তা ক্রেতার হাতে উঠিয়ে দেন দোকানিরা।
জাহিদুল, মানিক, ভুট্টো, মমতাজসহ একাধিক ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে জানান, এ শহরে প্রায় শতাধিক কাবাব ব্যবসায়ী রয়েছেন। প্রত্যেকেই গড়ে ৮-১০ কেজি গরুর মাংসের কাবাব বিক্রি করেন। তবে কয়েকজন ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা আরো অনেক বেশি মাংসের কাবাব বিক্রি করেন।
প্রতি শিক কাবাব ১০ টাকা ও পুরি ৫ টাকায় বিক্রি করা হয় বলেও জানান এসব ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৬
এমবিএইচ/আরআই