এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, ঢাকা-কলকাতা রুটে চলাচলকারী চারটি মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের সবগুলো কামরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হয়েই চলবে ফেব্রুয়ারিতে। যাত্রী ধারণ ক্ষমতাও বাড়ানো হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা রোববার (০১ জানুয়ারি) বিকেলে বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান। তিনি জানান, ইঞ্জিন ও এসি বগি স্বল্পতার কারণে জানুয়ারিতে সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু করা যায়নি।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘পক্ষকালের মধ্যে ভারত থেকে ইঞ্জিন ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচ আসবে। সেগুলো আমাদের ওয়ার্কশপে নিয়ে কিছু কাজ শেষে রেলপথে নামানো হবে’।
বর্তমানে সাত বগি নিয়ে ঢাকা-কলকাতা 'মৈত্রী এক্সপ্রেস' চলাচল করছে। বাংলাদেশ রেলের রেক ছোট বলে এসি/নন এসি মিলিয়ে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৪১৮ জন। আর ভারতীয় রেলের রেক কিছুটা বড় বলে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৪৫৯ জন।
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সাত বগির পরিবর্তে ফেব্রুয়ারিতে দশ বগি নিয়ে ঢাকা-কলকাতা রুটে 'মৈত্রী এক্সপ্রেস' চলাচল করবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলেও যাত্রী ধারণ ক্ষমতা থাকবে ৫০০ জন। এটিকার্যকর হয়ে গেলে 'মৈত্রী এক্সপ্রেস'-এ যাত্রীদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে আসন পেতে আর সমস্যা হবে না।
তবে ঢাকা-কলকাতা সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেল ভ্রমণে ভাড়া এখনও নির্ধারিত হয়নি। কোচগুলো এনে আনুসঙ্গিক সব কাজ শেষে মৈত্রীতে সংযোজনের পর হিসাব-নিকাশ করে ভাড়া ঠিক করা হবে বলেও জানিয়েছেন রেলওয়ের ওই কর্মকর্তা।
বর্তমানে এসি চেয়ারকোচে ১ হাজার ১৫০ টাকা ও এসি কেবিনে ১ হাজার ১৮০ টাকা ভাড়া নির্ধারিত রয়েছে। আর নন এসি টিকিটের মূল্য ৬৫০ টাকা। ভারতে ভ্রমণের কর ৫০০ টাকাও টিকিট সংগ্রহের সময় নিয়ে নেওয়া হয়।
ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রীদের বড় অভিযোগ, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসে বড় সময় ব্যয় হওয়া। এ কাজের জন্য যাত্রীদের ঘণ্টা তিনেক সময় বাড়তি লেগে যায়।
এ নিয়ে যাত্রীদের অসন্তোষ মৈত্রী এক্সপ্রেস চালুর শুরু থেকেই। তবে কর্তৃপক্ষ ট্রেনের মধ্যেই ইমিগ্রেশন-কাস্টমস সম্পন্নের চিন্তা-ভাবনা করছেন বলে সূত্রে জানা গেছে।
অবশ্য যাত্রীদের দাবির মুখে গত নভেম্বরে ঢাকা-কলকাতা রুটে সপ্তাহে চারদিন চালু হয়েছে'মৈত্রী এক্সপ্রেস'। ১১ নভেম্বর সকালে ভারতের রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু দিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কলকাতা-ঢাকা চতুর্থ মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রার সূচনা করেন।
অন্যদিকে ১২ নভেম্বর সকাল ৮টা ১০ মিনিটে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন থেকে চতুর্থ মৈত্রী এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করেন।
কলকাতা-ঢাকা চতুর্থ মৈত্রী এক্সপ্রেসটি প্রতি শুক্রবার কলকাতা থেকে ও শনিবার ঢাকা থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে মৈত্রী এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে প্রতি সপ্তাহের বুধ, শুক্র, শনি ও রোববার কলকাতার চিৎপুর স্টেশনেরউদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। আর শুক্র, শনি, সোম ও মঙ্গলবার সকালে কলকাতাথেকে ছেড়ে আসে ঢাকার গন্তব্যে।
২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল বর্ণাঢ্য আয়োজনে দুই দেশে একযোগে মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রা উদ্বোধন হয়। প্রথম দিকে যাত্রীর অভাবে প্রায় বন্ধ হতে বসেছিলো ট্রেনগুলো। ক্রমাগত লোকসান গুনতে থাকায় দু’পক্ষই মৈত্রী নিয়ে উৎসাহ হারিয়েও ফেলে।
এখন মৈত্রীতে আশাতীত যাত্রী বেড়েছে। চাহিদার দিনে অনেক সময় টিকিটও পান না যাত্রীরা। আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আসনের টিকিট পক্ষকালের আগে পাওয়া যায় না। সেজন্য যাত্রীরা দীর্ঘদিন ধরেই সপ্তাহে ছয়দিন মৈত্রী চালানোর দাবি জানিয়ে আসছেন।
প্রতিটি মৈত্রী এক্সপ্রেস থেকে বাংলাদেশ বছরে দুই কোটি টাকা আয় করে। এ আয়ে উদ্বুদ্ধ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
আকাশপথ বা স্থলপথের মতোই মৈত্রী এক্সপ্রেসের সিংহভাগ যাত্রী বাংলাদেশের মানুষ। শিক্ষা, চিকিৎসা, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ছাড়াও বহু মানুষই ভ্রমণের জন্য বেছে নেন কম খরচের হাতের কাছের কলকাতাকেই।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৭
এসএস/এএসআর