ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হাসিনার আশ্রয়ণের আছিয়াদের খবর নেয়নি কেউ

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৭
হাসিনার আশ্রয়ণের আছিয়াদের খবর নেয়নি কেউ হাসিনার আশ্রয়ণের আছিয়াদের খবর নেয়নি কেউ-ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: সামান্য বৃষ্টি হলেই পড়ে পানি। শীতের দিনেও কুয়াশায় ভিজে যায় ঘর। মানুষ তো দূরের কথা গবাদিপশু পাখি রাখারও কোন উপায় নেই। বোর্ড লাগানোর ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও জ্বলে উঠেনি বৈদ্যুতিক বাতি। নামে আশ্রয়ণ প্রকল্প হলেও বসবাসের অনুপযোগী।

এটি লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের ৩০টি ভূমিহীন পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হাসিনা শেখ হাসিনা সরকারের প্রথম মেয়াদে নির্মিত শীবেরকুটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের চিত্র।

১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসার পর ওই এলাকার গৃহ ও ভূমিহীন ৩০টি পরিবারের জন্য এ আশ্রয়ণ প্রকল্পটি তৈরি করা হয়।

সেখানে ৩০টি ভূমিহীন পরিবারের প্রত্যেকের নামে দুই শতাংশ জমি ও একটি থাকার ঘর করে দেয় সরকার। শুধু থাকার ব্যবস্থাই নয়। ছিল স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, টিউবওয়েল। মাছ চাষের জন্য বিশাল বড় পুকুর এবং সবজি চাষের জন্য উঠোন। বাচ্চাদের খেলাধুলার মাঠ। কিন্তু দেখভালের অভাবে আজ সবই অকেজো হয়ে পড়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য ওই এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছালেও সরকারি সদিচ্ছার অভাবে ২০ বছরেও বিদ্যুতের আলো দেখেনি আশ্রয়ণবাসী।

বাচ্চাদের খেলার মাঠ দখল করে দোকান ঘর নির্মাণ করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস নেই আশ্রয়ণবাসীর। শুধুমাত্র মনিটরিংয়ের অভাবেই নষ্ট হতে বসেছে সরকারি এ সম্পদ। হাসিনার আশ্রয়ণের আছিয়াদের খবর নেয়নি কেউ-ছবি: বাংলানিউজআশ্রয়ন প্রকল্পটির ১৪ নং কক্ষের বাসিন্দা নছিরন বেগম (৪০) তিন মেয়ে ও এক বাকপ্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে ২০ বছর ধরে বসবাস করছেন এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে। রিক্সা চালক স্বামীর আয়ে ২ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে স্থানীয় শীবেরকুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বৃষ্টি তো দূরের কথা শীতের সময়ও এ ঘরে থাকা যায় না। ভোটের সময় সবাই আশা দেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের মেরামতের। কিন্তু ভোট শেষ হলে আর দেখা পাওয়া যায় না।

ওই আশ্রয়ণের শাহিদা বেগম (৫০), তাহেরন (৬০) ও মর্জিনা (৫৫) জানান, বাচ্চাদের খেলার মাঠ দখল করে দোকান ঘরে করেছে প্রভাবশালীরা। বাচ্চাদের খেলাধুলা তো দূরের কথা দোকানের টিভি ও মাইকের শব্দে ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা করাই দায় হয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বলা হলেও কোন কাজ হয়নি। উল্টো তাদের ঘরছাড়া করার হুমকি দিয়েছে প্রভাবশালীরা।

আর্জিনা(৪২), ছেয়াবি (৫০) ও আতবি (৩৪) জানান, প্রায় ৮/১০ বছর ধরে ঘরের টিনগুলো নষ্ট হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা আসেন, দেখেন, চলে যান। সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেই। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরে হাঁটু পানি। এখন জমিটুকু ছাড়া সরকারের কোন কিছুই তাদের কাজে আসছে না। সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা। হাসিনার আশ্রয়ণের আছিয়াদের খবর নেয়নি কেউ-ছবি: বাংলানিউজশীবেরকুটি আশ্রয়ণের বয়োজেষ্ঠ্য বৃদ্ধা আছিয়া বেগম (৭৭) বলেন, হামরা দুঃখী মানুষ। কিছু নাই জন্যে হাসিনা সরকার হামাক (আমাদের) ঘর বাড়ি করি দিছে। হাসিনা সরকার আছে, কিন্তু হামার সেই ঘরে থাকপার (থাকতে) পাই না। হামার দুঃখ কায়ো (কেউ) দেখে না বাপু।

সদর উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন সময় ৪টি আদর্শ গ্রামে ৩৩৫টি পরিবার, ২টি গুচ্ছগ্রামে ৬০টি পরিবার, ৬টি আশ্রয়ণে ৪৮০টি পরিবার ও ৯টি আবাসনে ৮৪০টি পরিবারের জন্য ঘর বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।

সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, এ সব আশ্রয়ণ বা আবাসন প্রকল্প সংস্কার বা মেরামতের জন্য কোন বরাদ্দ নেই। তবে সরেজমিনে ঘুরে এসব প্রকল্পের তথ্য তৈরি করা হচ্ছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করার জন্য। বরাদ্দ এলে মেরামত করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৬
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।