পরিকল্পনা অনুযায়ী তের সদস্যের ডাকাতদল বগুড়ায় এসে শহরের বনানী এলাকায় মিলিত হয়। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়া মাত্র দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে শহরের প্রবেশ করে।
এরপর বগুড়া শহরের নিউমার্কেটে অবস্থিত আল হাসান জুয়েলার্স স্বর্ণের দোকান লুটের অপারেশন শুরু করে ওরা। জনমনে আতঙ্ক ছড়াতে প্রথমে একের পর এক ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। মুহূর্তেই চারদিক ফাঁকা হয়ে পড়ে।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকের ঘটনা। মুখোশ পড়ে আট ডাকাত সদস্য স্বর্ণের দোকানে যায়। কয়েকজন ভেতরে ঢুকে মালিক গুলজার রহমানকে গুলি করে আহত করে। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয় কর্মচারীদের। অনেকটা চোখের পলকে দ্রুত সবকিছু লুটে ডাকাতদল পরিকল্পনা মাফিক সটকে পড়ে।
শনিবার (২১ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসলাম আলী বাংলানিউজকে ঘটনার রহস্য উদঘাটন সম্পর্কে এসব তথ্য জানান।
ঘটনার দিন পুলিশ শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চালিয়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ডাকাত সদস্য আলমগীর হোসেনকে আটক করে। সঙ্গে লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকার ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস উদ্ধার করে পুলিশ।
কয়েকদিনের মাথায় পুলিশ বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু এলাকায় যাত্রীবাহী একটি বাসে অভিযান চালিয়ে ডাকাত সদস্য রিপনকে গ্রেফতার করে। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের কমিরগঞ্জ উপজেলার পিটুয়াবন্দর।
পরে রিপনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে আরেক ডাকাত সদস্য আলম খানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আলম বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বেজগাতি গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, রিপনকে গ্রেফতারের পর তাকে ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে মুখ খোলে। কিভাবে কতজন মিলে ওই স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি করে পালিয়ে যায় তার পুরো বর্ণনা দেয় সে। তের সদস্যের ডাকাতদল কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, ঢাকার আশুলিয়া, সাভারসহ বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। মূলত ঢাকায় বসেই তারা বগুড়ায় এই স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির পরিকল্পনা করে।
এ পর্যন্ত ডাকাতির ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে গুলিবিদ্ধ ডাকাত সদস্য আলমগীর হোসেন পুলিশি পাহারায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) চিকিৎসাধীন রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত রিপন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুজ্জামানের আদালতে দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। আলম খানও পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। বর্তমানে তারা দু’জন কারাগারে রয়েছেন।
পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আসলাম আলী আরো জানান, ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ১৩ জনকেই শনাক্ত করা গেছে। এরা সবাই পেশাদার অপরাধী। বাকিদের ধরতে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি অব্যাহত রয়েছে তদন্ত কার্যক্রম।
তবে ঘটনার সঙ্গে স্থানীয়রা জড়িত আছে কী-না তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৭
এমবিএইচ/আরআই