ট্রানজিটের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, চুক্তির আওতাভুক্ত চার দেশের মধ্যে একটি দেশ সাক্ষর না করার কার্যক্রম সেখানে থমকে রয়েছে। তবে তারা আশাবাদী সংশিষ্টদের আন্তরিকতায় এ চুক্তি একদিন বাস্তবায়ন হবে।
জানা যা রয়, সার্কভুক্ত পাশাপাশি চার দেশ বাংলাদেশ, ভুটান, ইন্ডিয়া ও নেপাল একে অপরের মধ্যে ব্যাপক বাণিজ্যিক চাহিদা রয়েছে। রয়েছে ভ্রমণের বিষয়েও। কিন্তু দেশ চারটির মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ট্রানজিট সুবিধা না থাকায় বাণিজ্য সম্পাদনে অতিরিক্ত সময় ও অর্থদণ্ড লেগে যায়। বিষয়টি মাথায় রেখে চার দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বাণিজ্য সম্পর্ক আরো উন্নয়নে সরকার প্রধানরা ট্রানজিট চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর শুরু হয় চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া।
২০১৫ সালের ১৪ নভেম্বর চার দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সরেজমিনে দেখতে সরকারি ও ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল ভারতের ওড়িশা প্রদেশ থেকে ২০টি মোটর কার নিয়ে র্যালি বের করে। সেখানে বাংলাদেশের ৬ জন, ভুটানের ৪, নেপালের ৪ এবং ভারতের ৬৬ জন অংশগ্রহণ করে। ১৮ দিনে ৪ হাজার ২২৩ কিলোমিটার পথ পরিভ্রমণ শেষে কলকাতায় পৌঁছে ০২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে যাত্রা শেষ হয়।
র্যালিতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্বে ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব নিরধ চন্দ্র মন্ডল, ভারতের চিফ কমিউনিকেশন অফিসার জগন্নাথিন সিজে, ভুটানের ফাইভ স্টার মেশিন গ্রিজের প্রধান নির্বাহী থিনলে ওয়াংচুক ও নেপালের নেতৃত্বে নেপাল অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান দাসারাথ রিসাল।
এছাড়া এপথে বাণিজ্যিক অবস্থা পর্যবেক্ষনে ২০১৫ সালের ০১ নভেম্বর পরীক্ষামূলক ভারতের কলকাতা থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে (ডব্লিউ বি-১১বি-৯৫১৯) একটি কার্গো ট্রাক বেনাপোল বন্দর হয়ে ভারতের আগরতলা বন্দরে যায়।
এক্ষেত্রে দেখা যায়, আগে কলকাতা থেকে পণ্যবাহী ট্রাকটি ভারত ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে আগরতলা পৌঁছাতে ১৫৫৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ৩ দিন সময় লাগতো। কিন্তু বাংলাদেশ ভূখণ্ড ব্যবহার করে ট্রাকটি আগরতলা পৌঁছাতে ৫৫৯ কিলোমিটার রাস্তা পার হতে মাত্র একদিন সময় লেগেছে। এতে দেখা যায় সময়ের পাশাপাশি অর্থ ও সাশ্রয় হবে ব্যবসায়ীদের।
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট চেম্বার অব কমার্সের সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বাংলানিউজকে জানান, চার দেশের মধ্যে সড়ক পথে পণ্যবাহী কার্গোর ট্রানজিট চুক্তি বাস্তবায়ন হলে তা বাণিজ্য সম্প্রসারণে বড় ভূমিকা রাখবে। এনিয়ে আমাদের অনেক প্রত্যাশা। কিন্তু সব কিছু প্রায় ঠিকঠাক থাকলেও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমরা অনেকটা হতাশার মধ্যে রয়েছি। বন্ধুত্ব ও বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে ট্রানজিট চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নে সংশিষ্ট সবাই এগিয়ে আসবেন এমনটি আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) ফয়জুর নাহার বাংলানিউজকে জানান, বুড়িমারি, তামাবিল, আখাউড়া ও বেনাপোল বন্দর দিয়ে ট্রানজিট চুক্তিতে চার দেশের মধ্যে পণ্য পরিবহনের সব প্রস্তুতি রয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের। কিন্তু চার দেশের মধ্যে কাগজ কলমে কিছু আনুষ্ঠানিকতা অসম্পূর্ণ থাকায় গত এক বছরে এ চুক্তি বাস্তবায়ন আলোর মুখ দেখেনি। শুধুমাত্র পরীক্ষামূলক একটি কার্গো ট্রাক ইতিপূর্বে কলকাতা থেকে বেনাপোল বন্দর হয়ে ভারতের আগরতলা বন্দরে পণ্য পরিবহন করেছে বলে জানান তিনি।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল মালেক মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে জানান, চুক্তি কার্যকর করতে হলে ৪ দেশের সম্মতি থাকতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া ও নেপাল অনেক আগেই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছে। কিন্তু ভুটানের পার্লামেন্টে এ বিষয়ে প্রস্তবনা এখন পর্যন্ত পাস না হওয়ায় কার্যক্রম সেখানে থমকে আছে। তবে চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক ভাবে চেষ্ঠা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৭
এজেডএইচ/এসএইচ