সম্প্রতি একাধিক ভুক্তভোগী মোবাইল ফোন এবং ই-মেইলের মাধ্যমে বাংলানিউজের কাছে এমন দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন।
এমনকি বাংলানিউজের তিনজন কর্মী পাসপোর্ট করতে গিয়ে স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) এমন হয়রানির শিকার হয়েছেন।
এসময় তার অবস্থান ঢাকায় জানালে, বিকাশ করে টাকা দেওয়ার কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট এসবির পুলিশ অফিসার। এর মধ্যে একজন নারী পুলিশ অফিসারও রয়েছে। খরচ আবার কিসের এমন প্রশ্ন তোলা হলে, এসবির ওই অফিসাররা দাবি করেছে, পুলিশ ভেরিফিকেশন কিনে নিতে হয়। প্রত্যেকটির বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ঊর্ধ্বর্তন পুলিশ কর্মকর্তাকে দিতে হয়। তাই বিনা পয়সার রিপোর্ট দেওয়া তাদের পক্ষ থেকে সম্ভব নয়। না হলে নেগেটিভ রিপোর্ট যাবে বলেও হুমকি দিয়েছেন।
ওই কর্মীরা জানিয়েছে, তারা দীর্ঘদিন সপরিবারে ঢাকায় থাকেন। এলাকায় তাদের আত্মীয় স্বজনরা থাকেন। পুলিশ হুমকি দিয়েছে তাদের বাড়ি এখানে নেই এমন রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়ার।
অথচ তাদের স্বজনের চিকিৎসার জন্য দ্রুত দেশের বাইরে যাওয়ার কথা। কিন্তু শুধুমাত্র পুলিশের এই ঘুষ না দেওয়াতে পাসপোর্ট তুলতে পারছেন না। পুলিশের খামখেয়ালির কারণে একজন রোগীর জীবন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পাসপোর্ট বানাতে গিয়ে পুলিশী তদন্তে দীর্ঘদিন ধরেই এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। দিনদিন এ প্রবণতা মহামারী আকার ধারণ করেছে। কেউ বাদ যাচ্ছে না এই হয়রানি থেকে। এমনকি খোদ বিচারপতিকে ছাড় দেয়নি পুলিশ। হাইকোর্টের বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের দুই মেয়ের পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজনে সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) সাদেকুল ইসলাম তার বাসায় যান।
এ প্রতিবেদন দিতে বিচারপতির স্ত্রীর কাছে দুই হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। কিন্তু বিধিবাম বিচারপতি উচিত কাজটি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি ঘুষ চাওয়ার অপরাধে এসবি’র এএসআই সাদেকুল ইসলামকে সরাসরি পুলিশে সোপর্দ করেছিলেন।
কোর্টে তোলা হলে ওই পুলিশ অফিসারকে হাজতে পাঠানো হয়েছিল। একইসঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শককে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে মিডিয়া অনেক ফলাও করে প্রচার করেছিল। জনগণের প্রশ্ন হচ্ছে বিচারপতি না হয় পুলিশে দিয়েছেন। সাধারণ জনগণের কী করার আছে?।
ওই ঘটনার পর জনগণ আশা করেছিল, এবার যদি পুলিশের কিছুটা বোধদয় হয়। কিন্তু না, যা অবস্থা সেই রয়ে গেছে। কোনো কিছুই মানছে না পুলিশ। আগে টাকা তারপর রিপোর্ট, এই নীতিতে চলছে তাদের সেবা।
ফরিদপুরের পুলিশ সূত্র দাবি করেছে, তারা প্রত্যেকটি তদন্ত দু’শ টাকা দিয়ে কেনেন। এর সঙ্গে শ্রম মিলিয়ে উৎকোচ আদায় করেন। এতে নাকি তারা কিছুটা অসহায়, যত দোষ বড় কর্তার। তারা গুনে গুনে কমিশন আদায় করেন।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহার কাছে প্রশ্ন ছিল, তারা যে তদন্ত কিনে নেওয়ার কথা বলেছেন বিষয়টি কতটুকু সঠিক। জবাবে তিনি বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, হয়তো সুবিধা আদায়ের জন্য এমন কথা বলে থাকতে পারেন। তবে বিষয়টি সঠিক নয়। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি, কেন এমন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৭
এসআই/এসএইচ