ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৫১ শতাংশ তামাকপণ্যে সচিত্র সতর্কবাণী মুদ্রণ হয়নি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৭
৫১ শতাংশ তামাকপণ্যে সচিত্র সতর্কবাণী মুদ্রণ হয়নি

ঢাকা: ৫১ শতাংশ তামাকপণ্যে শতভাগ আইন মেনে সচিত্র সতর্ককাণী মুদ্রণ করা হয়নি। তবে বিড়িতে সতর্কবাণী আইন না মানার হার শতভাগ। যা খুবই উদ্বেগজনক। 

কোম্পানিভিত্তিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ১৬৪টি তামাকপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫১টি শতভাগ কমপ্লায়েন্স অনুসরণ করেনি। সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়ন বিষয়ক এক জরিপে এ তথ্য উঠে আসে।

 

রোববার (২২ জানুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জরিপটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।  

৮টি বিভাগীয় শহরে তামাকবিরোধী সংগঠনের পক্ষে জরিপটি পরিচালনা করে অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি), ঢাকা আহসানিয়া মিশন, সীমান্তিক, ইয়াং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন (ইপসা), ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল এবং প্রজ্ঞা।  

ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৩ এর ১০ (১) ধারা অনুযায়ী, সব তামাকজাত দ্রব্যের মোড়ক, কার্টন বা কৌটার উভয় পাশে মূল প্রদর্শনীর উপরিভাগে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ স্থান জুড়ে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারে সৃষ্ট ক্ষতি ও সম্পর্কিত রঙিন ছবি ও লেখা সম্বলিত সতর্কবাণী মুদ্রণ বাধ্যতামূলক। এই আইন যথাযথ বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়ে ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ থেকে প্রায় ৮ মাস তামাক কোম্পানিগুলো আইন অনুযায়ী এ বিধান কতটুকু প্রতিপালন করছে তা মূল্যায়নের জন্য গবেষণাটি করা হয়। একই বছরের ১৬-২৩ নভেম্বর পর্যন্ত গবেষণা কার্যক্রমটি চলে।

গবেষণায় আরো উঠে আসে, ৯২ দশমিক ০৭ শতাংশ তামাকপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সচিত্র সতর্কবাণী মুদ্রণ সংক্রান্ত শতভাগ কমপ্লায়েন্স অনুসরণ না করেই পণ্য বিক্রি করছে। ৪০ দশমিক ২ শতাংশ জর্দা কৌটায় এখনও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ করা হয়নি বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এতে আরো জানানো হয়, জর্দায় ৯৬ দশমিক ৪ শতাংশ, গুলে ৭৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং সিগারেটে ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ ক্ষেত্রেই আইন মেনে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়ন করা হয়নি।  

মোট ১ হাজার ৮২৭টি তামাকপণ্যের প্যাকেট বা কৌটা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, এর মধ্যে ৩৫০টি প্যাকেট এবং ১৭টি ব্র্যান্ডের ৭০টি বিড়ির প্যাকেটের মধ্যে ১০টিতে কোনো সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী নেই।

এছাড়া ৩১ শতাংশ বিক্রেতাই জানেন না সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ বাধ্যতামূলক।

বিড়ির প্যাকেটের সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর অবস্থান বিষয়ক চিত্র খুবই ভয়াবহ। ৯১ দশমিক ক্ষেত্রেই আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী রুহুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষই জেনে শুনে তামাক সেবন করেন। তামাকপণ্যে সতর্কবাণী বাস্তবায়নের এ ফলাফলে আমি আশাবাদী নই।  

নিজেদের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে তিনি বলেন, তামাকপণ্যে মোবাইল কোর্ট করতে এখন ম্যাজিস্ট্রেটকে সম্মানী দিতে হয়। অনেক সময় পুলিশ প্রশাসন পাওয়া যায় না। এছাড়া বাজেটেরও কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে।  

এ বিষয়ে প্রতিটি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদেরকে অনুরোধ করেছি, তামাক নিয়ন্ত্রণে তারা যেন আমাদের সহায়তা করেন। এছাড়াও উপজেলা পর্যায়ে তামাকবিরোধী কমিটি গঠনের জন্য পলিসি গ্রহণ করার পরিকল্পনা চলছে।  

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক আব্দুল মালিক বলেন, এ সমস্যার সমাধানে শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নয় কয়েকটি মন্ত্রণালয়কে একযোগে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি তামাকপণ্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলারও পরামর্শ দেন তিনি।

অ্যান্টিটোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স’র (আত্মা) কো-কনভেনর নাদিরা কিরনের সঞ্চালনায় গবেষণার বিভিন্ন দিক উপস্থাপন করেন প্রজ্ঞার কো-অর্ডিনেটর হাসান শাহরিয়ার।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকে ফ্রি-কিপস’র গ্রান্ট ম্যানেজার ড. মাহফুজুল হক, দ্য ইউনিয়ন’র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম প্রমুখ।   

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৭/আপডেট: ১৫৪৮ ঘণ্টা
জেডএফ/আরআর/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।