শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীতে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। দেশের মানুষের অন্যতম প্রধান জীবিকা কৃষিকাজে পড়ছে মারাত্মক প্রভাব।
বাংলাদেশের নদীগুলোর পানির স্তর নিচে চলে যাওয়ার প্রভাব থেকে দেশের জনগণকে রক্ষা করতে ন্যায়সঙ্গত এবং সুষম পানিবণ্টন চুক্তিতে সই ও তা কর্যকর করার জন্য ভারতকে আহ্বান জানিয়েছে বিশেষজ্ঞ এবং দেশের মানুষ। যে আহ্বান গত কয়েক বছর থেকেই বাংলাদেশ ভারতকে করে আসছে। কিন্তু এ বিষয়ে নিশ্চুপ ভারত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের তিস্তা পনিবণ্টন চুক্তি সম্পন্ন না হওয়ার কারণে বড় ধরনের প্রভাব মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সেই প্রভাব দিন-দিন বাড়ছে। জরুরি ভিত্তিতে এ পানিবণ্টন চুক্তি হওয়া উচিত। কারণ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দেশের অর্থনীতি কৃষির ওপর নির্ভরশীল। পানি ঘাটতির জন্য তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় কৃষি জমিতে পযার্প্ত সেচ দেওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ভারতে তিস্তা নদীর মুখে বাঁধের কারণে তিস্তার পানি ভারতের বিভিন্ন অংশে চলে যাচ্ছে। পনিবণ্টন চুক্তি না থাকায় কোনো ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছে না ভারত।
অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা আশা করি বাংলাদেশ সরকার তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব শিগগিরই ভারত সফর করবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চুক্তির বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।
এছাড়া কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় পানি বণ্টনচুক্তি বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বুয়েটের ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. আতিয়ার রহমান জানান, তিস্তা নদীতে পানি সংকটের কারণে বাংলাদেশ অংশে পরিবেশগত ক্ষতিসাধন হচ্ছে। এমনকি সেখানে ফসল চাষাবাদের জন্য পর্যাপ্ত পানিও পাওয়া যাচ্ছে না।
তিস্তা নদীতে পানি প্রভাব ঠিক রাখতে ৩ হাজার কিউসেক পানি দরকার বলেও জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক এ কিউ এম মাহমুব বলেন, যদি নদীতে পানি না থাকে, তবে এটিকে নদী বলা যায় না। পানিশূন্য নদী শুধু ফসলের ওপরই নয়, পরিবেশের ওপরও প্রভাব ফেলে। নদীর পানির মধ্যদিয়ে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকে। ফসল ও বৃক্ষরাজির প্রাণ হলো নদী।
এ অঞ্চলের বন্যা এবং খরা মোকাবেলা করতে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং চীনের পানি ব্যবস্থাপনা নীতি সমন্বয় করা উচিত বলেও মন্তব্য তিনি।
সূত্র বলছে, তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের জন্য ১০ হাজার কিউসেক পানি প্রয়োজন, সেখানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৪০০ কিউসেক। কিছুদিন আগেও তিস্তা ব্যারেজে পানির স্তরের পরিসীমা ৭০০ থেকে ৮০০ কিউসেক ছিল। বর্তমানে তিস্তায় পানি সংকটের কারণে বোরো আবাদি কৃষকরা ব্যাপক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে দারিদ্র্যপীড়িত উত্তরাঞ্চলের মানুষের রুটি ও রুজির বিষয় বিবেচনা এবং দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো সুদৃঢ় করতে জরুরি ভিত্তিতে তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি সই এবং তা পরিপূর্ণভাবে কার্যকরের দাবি জানিয়েছে দেশের বিশেষজ্ঞ মহল ও সাধারণ মানুষ।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৭
টিআই