ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অকেজো সড়কবাতি, রাতে ভুতুড়ে অন্ধকারে ব্রহ্মপুত্র সেতু

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৭
অকেজো সড়কবাতি, রাতে ভুতুড়ে অন্ধকারে ব্রহ্মপুত্র সেতু অকেজো সড়কবাতি/ ছবি- অনিক খান

ময়মনসিংহ: সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই স্বাভাবিকভাবেই ময়মনসিংহ নগরীর পাটগুদাম এলাকার ব্রহ্মপুত্র সেতুর সড়কবাতিগুলো জ্বলে ওঠার কথা। অথচ এসব বাতিগুলো দাঁড়িয়ে আছে আলোহীন হয়ে। 

ব্রিজের দু’পাশেই সোডিয়াম বাতির জন্য ‘পোল’ থাকলেও বাতিগুলোই অকেজো হয়ে আছে বছরের পর বছর।  

সড়কবাতিগুলোর নিষ্ক্রিয়তার কারণেই রাতে এখানে নেমে আসে ভুতুড়ে অন্ধকার।

ভয় আর আতঙ্ক নিয়েই সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলরত গাড়ির আলো দিয়েই পথ চলতে হয় পথচারীদের।  

আর অন্ধকারের এ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিদিনই ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। বাড়ছে মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্য। তবুও না দেখার ভান করছে স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কর্তৃপক্ষ।  

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে সরেজমিন ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত প্রায় ৫শ’ মিটার দীর্ঘ এ সেতু ঘুরে দেখা গেলো এমন চিত্রের। সড়কবাতি না থাকায় অন্ধকারে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

জানা গেছে, বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, শেরপুর ও ময়মনসিংহের ফুলপুর, তারাকান্দা ও হালুয়াঘাটের যানবাহনের চলাচলের একমাত্র পথ এ সেতু। সদর উপজেলার শম্ভুগঞ্জসহ চরাঞ্চলের মানুষেরও যাতায়াত এ পথেই।  

১৯৯২ সালের শুরুর দিকে এ সেতু উদ্বোধনের পর সেতুর দু’পাশে মোট ২৬টি সোডিয়াম বাতি ও ১৬টি গোলাকার বাতি লাগানো হয়েছিল। দীর্ঘ সময় ধরে এসব বাতি জ্বললেও প্রায় বছর পাঁচেক ধরে আর আলো দিচ্ছে না। সবগুলো বাতিই অকেজো হয়ে আছে।  

বছর দুই আগে একবার এ নিয়ে বাংলানিউজে সংবাদ প্রকাশের পর স্থানীয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) কর্তৃপক্ষ ৫ থেকে ৭টি এনার্জি বাল্ব লাগিয়েছিল। ফলে সেতুর এক কোণে নিবু নিবু করে আলো জ্বলছে। ভয়ে অনেক রিকশা চালক রাতে এখান দিয়ে যাত্রী পরিবহনও করতে চান না।  

সূত্র জানায়, বরাবরের মতো মাস ছয়েক আগেও স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এ সেতুর টোল আদায়ে স্থানীয় মেসার্স ফরহাদ এন্টারপ্রাইজকে ইজারার দায়িত্ব দেয়।  

প্রতিদিন সেতুর ওপর দিয়ে গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে। এ হিসাবে প্রতি মাসে কমপক্ষে কোটি টাকার টোল আদায় হচ্ছে।  

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ইজারাদার নিজেদের পকেট ভারি করলেও নষ্ট সড়কবাতিগুলো সচল করতে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এদিকে তাদের কোনো দৃষ্টিও নেই। অটোরিকশার আলো পথ দেখাচ্ছেস্থানীয়রা জানান, কোনো কোনো সময় ছিনতাইকারী ও মাদকসেবীরা বিদ্যুতের সংযোগ লাইনের তার পর্যন্ত কেটে নিয়ে যায়। ফলে এনার্জি বাল্বগুলোও জ্বলে না।  

এতে পুরো সেতু সন্ধ্যা হতেই নিকষ কালো অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে থাকে।  

মূলত বাতির বৈদ্যুতিক তারে কার্বন জমে যাওয়া, মরিচা ধরা, স্টার্টার বা টিউব নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে সোডিয়াম বাতিগুলো নষ্ট হয়ে আছে।  

স্থানীয় চরকালিবাড়ি এলাকার বাসিন্দা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার যাত্রী রাজিব সরকার বাংলানিউজকে বলেন, সড়কবাতিগুলো না জ্বলার কারণে প্রতিনিয়তই নিরাপত্তাহীনতায় পথ চলতে হয়। প্রায় সময়েই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।  

এ সেতু এলাকার অটোরিকশা চালক রাহাদ মিয়া বলেন, অনেকবার বলছি। কোনো কাজ হয়নি। টোল আদায় করে কর্তৃপক্ষ লাখ লাখ টাকা পকেটে ভরলেও এদিকে কারো খেয়াল নেই।  

অন্ধকারাচ্ছন্ন সেতুতে নেশাখোররা ছিনতাইয়ে নামে। নষ্ট হওয়া বাতিগুলো আলো ছড়ালেই ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য কমে আসবে, মনে করেন এ চালক।

এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) সদ্য বিদায়ী অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শাহাবুদ্দিন খান বাংলানিউজকে বলেন, এ সেতু রক্ষণাবেক্ষণে কোনো বরাদ্দ নেই। কয়েক বছর আগে সেতুর ইজারাদারকে বলে কয়েকটি এনার্জি বাল্ব লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল।  

জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ খান বাংলানিউজকে জানান, বেশিরভাগ সোডিয়াম বাতিই নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো সচলের জন্য ইজারাদারকে নির্দেশনা দেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৭ 
এমএএএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।