২০১৪ সালে জেএমবির আব্দুস সামাদ ওরফে আরিফ মামু ওরফে আশিকের সঙ্গে তামিমের পরিচয় হয়। তামিম চৌধুরী নিজেকে প্রধান ও সামাদকে সেকেন্ড ইন কমান্ড করে 'জুনুদ আল তৌহিদ আল খিলাফা' নামে জঙ্গি সংগঠন গড়েন।
পরে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর আদর্শে প্রভাবিত হয়ে নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করেন তারা। যা পরে নব্য জেএমবি হিসেবে আখ্যায়িত হয়।
তামিম চৌধুরী দীর্ঘদিন বিদেশে থাকলেও অত্যন্ত কম সময়ে তার নব্য জেএমবি গঠনের পেছনে সামাদের বড় অবদান ছিল। সদস্য সংগ্রহে সামাদ ‘সেতুবন্ধন’ হিসেবে কাজ করেছেন।
গ্রেফতারকৃত নব্য জেএমবির তিন সদস্য আব্দুস সামাদ, জিয়াদুল ইসলাম ও আজিজুল ইসলামকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এসব কথা জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে রাজধানীর মহাখালী থেকে গ্রেফতার করা হয় ওই তিন জঙ্গিকে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২০০টি ডেটোনেটর, ১টি পিস্তল ও ৫ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে তাদের বিষয়ে জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলন মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দিনাজপুরের বাসিন্দা সামাদ ২০১০ সালে জেএমবিতে যোগ দেন। দেলোয়ার মিস্ত্রি ও শহীদুল ইসলাম খালিদের মাধ্যমে ২০১৪ সালে তামিমের সঙ্গে দেখা হয় তার। নতুন দল গঠনের পর অনেকগুলো ট্রেনিং ক্যাম্পে ঘুরে ঘুরে বক্তৃতা দিয়ে সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করতেন এই সামাদ’।
‘সামাদের বাড়ি উত্তরবঙ্গে হওয়ায় এবং ওই এলাকাকে নতুন সদস্য রিক্রুটের উপযুক্ত মনে করায় সামাদকে এক সময় উত্তরবঙ্গে পাঠিয়ে দেন তামিম’।
মনিরুল ইসলাম জানান, সামাদ নেতৃত্বের পর্যায়ের হওয়ায় কোনো অপারেশনে তার সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার আগেই তাকে উত্তরবঙ্গে পাঠয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাই ওই ঘটনায়ও তার জড়িত থাকার প্রমাণ নেই। যে অস্ত্রগুলো তারা ঢাকায় নিয়ে এসেছেন, সম্ভবত সেগুলো কারো কাছে হস্তান্তরের জন্য আনা হয়েছিল।
তবে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে বলেও জানান সিটিটিসি প্রধান।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা জিয়াদুল ইসলাম সামাদের শ্বশুর। নব্য জেএমবির অস্ত্র সরবরাহকারী ছোট মিজান ও সোহেল মাহফুজের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে আনা অস্ত্র ও ডেটোনেটরগুলো তার মাছের খামারে লুকিয়ে রাখতেন জিয়াদুল।
গ্রেফতারকৃত অন্যজন আজিজুল দুই বছর আগে নব্য জেএমবিতে ‘হিজরত’ করেন। তবে প্রাথমিকভাবে কোনো ঘটনার সঙ্গে তার জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ‘নব্য জেএমবির হাজার হাজার সদস্য ছিলেন না। হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় হামলার বাইরে একজনের বিরুদ্ধেই এক থেকে সর্বোচ্চ ২২টি ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে’।
‘হলি আর্টিজান হামলা পরবর্তী সময়ে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ জন নব্য জেএমবির সদস্য গ্রেফতার হয়েছেন। বিভিন্ন অভিযানে প্রায় ৮০ জন মারা গেছেন। তবে সংগঠনটি এখন বিপর্যস্ত, তাদের নতুন কোনো ঘটনা ঘটানোর সক্ষমতা নেই’।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৭
পিএম/এএসআর