ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শীত-রাত কষ্টে পার করছে ছিন্নমূল মানুষ

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৭
শীত-রাত কষ্টে পার করছে ছিন্নমূল মানুষ কমলাপুর রেল স্টেশন, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, হাইকোর্টের গেট, কারওয়ানবাজারসহ বিভিন্নস্থানে দেখা গেছে গুটিশুটি মেরে সামান্য কাপড় বা পাতলা কম্বলে শরীর ঢেকে রাত পার করার চেষ্টা করছেন সবাই।

ঢাকা: ধীরে ধীরে সাইবেরিয়ান হিমেল হাওয়া গ্রাস করতে শুরু করেছে ঢাকাবাসীকে। উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিক থেকে নেমে এসে ঘণ্টায় ছয় থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া এ হাওয়া ভোগান্তি বাড়িয়েছে ছিন্নমূল মানুষের।

বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা থেকেই বইতে শুরু করেছে ঠান্ডা হাওয়া। তাই ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাও সন্ধ্যার পর থেকে এক দুঃসহ রাতের ভোগান্তিতে ফেলেছে অসহায় মানুষদের।

তাইতো রাতের ঢাকায় মোড়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে শীতার্তদের। কমলাপুর রেল স্টেশন, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, হাইকোর্টের গেট, কারওয়ানবাজারসহ বিভিন্নস্থানে দেখা গেছে গুটিশুটি মেরে সামান্য কাপড় বা পাতলা কম্বলে শরীর ঢেকে রাত পার করার চেষ্টা করছেন সবাই।

কমলাপুর রেল স্টেশনে পত্রিকা বিছিয়ে গুটিশুটি মেরে পাতলা কম্বল জড়িয়ে শুয়ে আছেন মিজানুর রহমান। বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায়। ১১দিন হলো কাজের সন্ধানে ঢাকায় এসেছেন তিনি। এখনো কাজ ও থাকার জায়গার ব্যবস্থা না হওয়ায় কমলাপুর স্টেশনেই রাত কাটাচ্ছেন। এই কয়দিন কোনো রকম পার করতে পারলেও আজকের রাতটিকেই তার কাছে জীবনের সবচেয়ে কঠিন ও দীর্ঘতর রাত মনে হচ্ছে বলে জানালেন।

অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের বারান্দায় অন্যদের সঙ্গে জড়াজড়ি করে শুয়ে থাকা বৃদ্ধ মোসলেম উদ্দীন জানান, এতোদিন এখানে এতো মানুষ এক সঙ্গে ঘুমাতেন না। আজ ঠান্ডা বাতাসে কাহিল হয়ে সবাই ছাদের নীচে আশ্রয় নিয়েছেন।

যদিও বৃহস্পতিবার রাতের প্রথম ভাগে ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা আস্তে আস্তে কমতে কমতে ১৬ ডিগ্রিতে এসে দাঁড়ায়। ভোরের দিকে তাপমাত্রা আরো এক ডিগ্রি কমবে বলে জানাচ্ছে আক্কু ওয়েদার। উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রতিঘণ্টায় ছয় কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা হিমেল হাওয়া প্রকৃত তাপমাত্রাকে আরো কষ্টকর করে তুলেছে। তবে শুক্রবার তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বাড়তে পারে। এদিন সর্বচ্চ তাপমাত্রা হবে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আকাশ কুয়াশাচ্ছন্নসহ হালকা মেঘলা থাকতে পারে। আগামী এক সপ্তাহে ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২৪ ও সর্বনিন্ম ১৫ ডিগ্রি থাকবে বলেও জানাচ্ছে সংস্থাটি। শীত-রাত কষ্টে পার করছে ছিন্নমূল মানুষ

এদিকে, বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, শুক্রবারের আবহাওয়ায় খুব বেশি পরিবর্তন আসবে না। তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। তবে দক্ষিণাঞ্চলে হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশ মাঝারি কুয়াশার চাঁদরে মোড়ানো থাকবে। দক্ষিণ আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি একই এলাকায় লঘুচাপের বর্ধিতাংশ হিসেবে অবস্থান করছে। উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এজন্য মেঘলা আবহাওয়াসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে।

সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকায় কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়বে। কমলাপুর রেল স্টেশন, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, হাইকোর্টের গেট, কারওয়ানবাজারসহ বিভিন্নস্থানে দেখা গেছে গুটিশুটি মেরে সামান্য কাপড় বা পাতলা কম্বলে শরীর ঢেকে রাত পার করার চেষ্টা করছেন সবাই।
 
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র এক পূর্বভাসে জানিয়েছে, ঘন কুয়াশার কারণে নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়ার কারণে দৃষ্টিসীমা ৫শ’ মিটার বা তার চেয়েও কমে যেতে পারে। তাই নৌযানগুলোকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। তবে কোনো সতর্ক সংকেত দেখায়নি সংস্থাটি।
 
আরএম/ বাংলাদেশ সময়: ০৪৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।