হালের কম্পিউটার আর সিনেপ্লেক্সের যুগে এই বাক্সের কদর ফুরিয়েছে অনেক আগেই। আশ্চর্যকর এই বাক্সের অনুভূতি এখন কারো মনে দাগ না কাটলেও দাদা, পর দাদাদের কাছে এ যন্ত্রটিই ছিল চলন্ত দৃশ্যাবলী দেখার এক অনন্য সুযোগ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ আয়োজিত জয়নুল মেলা-২০১৭ গিয়ে দেখা মিলল, প্রায় হারিয়ে যাওয়া এই বায়োস্কোপের। সেখানে আব্দুল জলিল তার হাতের খঞ্জরি বাজিয়ে তালে তালে গেয়ে চলেছেন, তারপরেতে দেখা গেল- লনডন শহর আইসা গেল, দার্জিলিং আইসা গেল…। এভাবেই প্রায় মিনিট পাঁচেক চলার পর থেমে গেল জলিলের হাতের খঞ্জরি। কোনো দৃশ্য দেখতে না পেরে শিশুগুলোও মাথা তুলে নিল। বিনিময়ে শিশুদের বাবা-মা জলিলকে টাকা পরিশোধ করে চলে গেল।
সোলাইমান লিমন নামের দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশুটি আবারো দেখবে বলে বায়না ধরলো বাবা আহসান লিখনের কাছে। তাতে অবশ্য বাধ সাধলেন না তিনি। বাংলানিউজকে বলেন, খুব ছোটবেলায় এই যন্ত্রের মাধ্যমেই প্রথম চলন্ত দৃশ্য দেখেছি। এটি তো আর দেখাই যায় না। তাই ছেলেকেও এটার সুযোগ দিলাম। ভালই লাগলো।
লিমনের দেখাদেখি রুকনুজ্জামান অয়নও তার মার কাছে বায়না ধরল। অবশেষে অয়নেরও দ্বিতীয়বার দেখার সুযোগ হলো। অয়নের মা ঐশি রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বায়োস্কোপের কথা মা কাছে শুনেছি, গানেও আছে। কিন্তু কখনো দেখিনি। তাই নিজের ছেলেকে দেখালাম। ছেলেও ভীষণ খুশি।
রাজশাহীর বাগমারা থেকে জয়নুল মেলায় বায়োস্কোপ নিয়ে এসেছেন আব্দুল জলিল। তার বাবা, দাদা তার বাবা, এই বায়োস্কোপ দেখিয়ে সংসার চালাতেন। জলিলও ৪০ বছর আছেন এই পেশায়। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গেই গ্রামে ঘুরে ঘুরে বায়োস্কোপ দেখাতেন। কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই। বায়োস্কোপ আর মানুষ দেখে না। তাই এ পেশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। গ্রামগঞ্জে মেলা বসলেই কেবল নিয়ে বের হন। অন্যথায় অন্যের বাড়িতে কাজ করেই চলে তার সংসার।
**এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিলো দ্বার
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৭
ইইউডি/এসএইচ