ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খুলনায় অভুক্ত পাটকল শ্রমিকদের হাহাকার!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৮
খুলনায় অভুক্ত পাটকল শ্রমিকদের হাহাকার! পাটকল শ্রমিকদের বিক্ষোভ-ছবি- মানজারুল ইসলাম

খুলনা: মজুরি নেই, ঘরে চাল, ডাল, তেল নেই। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসার নিশ্চয়তা নেই। রাত-দিন কাটছে আন্দোলনে। পরিবারে চলছে হাহাকার! বকেয়া মজুরি আদায়ে টানা ৬ দিন আন্দোলনরত খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ব ৮ পাটকলের শ্রমিকদের পরিবারে চলছে এমন অবস্থা।

বৃহস্পতিবার (০৪ জানুয়ারি) খালিশপুর শিল্পাঞ্চলে সড়ক অবরোধ, টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। এদিন ক্রিসেন্ট, স্টার, ইস্টার্ন, খালিশপুর ও দৌলতপুর জুট মিলে শ্রমিকদের এক সপ্তাহের মজুরি দেওয়া হলেও হয়নি প্লাটিনাম, আলীম ও জে জে আই জুট মিলে।

ফলে প্লাটিনাম জুট মিল শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন।  
         
শ্রমিকরা জানান, মজুরি না পেয়ে অভুক্ত অবস্থায় উৎপাদন অব্যাহত রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। নিরুপায় হয়েই তারা উৎপাদন বন্ধ করে আন্দোলনে নেমেছেন। বকেয়া সব মজুরি একসঙ্গে না পাওয়া পর্যন্ত তারা কাজে ফিরে যাবেন না।

তারা আরও জানান, ২৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টায় ৮ সপ্তাহের মজুরির দাবিতে প্লাটিনাম জুট মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা। পরবর্তীতে সকাল ১০টায় একে একে ক্রিসেন্ট, দৌলতপুর ও স্টার জুট মিলের শ্রমিকরা তাদের মিলের উৎপাদন বন্ধ রেখে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ চারটি মিল বন্ধের সংবাদ পেয়ে দুপুর ২টার দিকে আটকরা-গিলাতলা শিল্পাঞ্চলের ইস্টার্ন এবং যশোর অভয়নগরের জে জে আই জুট মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা।  ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আলীম জুট মিলের শ্রমিকরা উৎপাদন বন্ধ করে দেন। আর শনিবার খালিশপুর জুট মিলের শ্রমিকরা উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন।

বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, ইস্টার্ন, আলিম ও যশোরের জে জে আই জুট মিল চালু থাকলে প্রতিদিন প্রায় ২২৫ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য উৎপাদন হতো। সেই হিসেবে গত ৬ দিনে ১ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য উৎপাদন বিঘ্নিত হয়েছে। যার মূল্য প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা।

সূত্রটি জানায়, ৮টি পাটকলের ২৬ হাজার ৭১৮ জন শ্রমিকের ৪ থেকে ১২ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। সবমিলিয়ে শ্রমিকদের পাওনার পরিমাণ ৪০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ৯টি পাটকলে বর্তমানে ২১ হাজার ৪৭৪ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য বিক্রির অপেক্ষায় পড়ে রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ২১৫ কোটি টাকা।

প্লাটিনাম জুট মিলের সাবেক সভাপতি মো. খলিলুর রহমান বলেন, শ্রমিকরা মজুরি না পেয়ে ফুঁসে উঠেছে। তারা মজুরি দেওয়াসহ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবে না। তিনি অবিলম্বে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেওয়ার দাবি জানান।

প্লাটিনাম জুট মিল সিবিএ’র সাবেক সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, মজুরি না পেয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটানো শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। অথচ মিল কর্তৃপক্ষ বকেয়া টাকা দেওয়ার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদের কার্যকরী আহ্বায়ক সোহরাব হোসেন বলেন, শ্রমিকদের বকেয়া সব মজুরি একসঙ্গে পরিশোধ না করা পর্যন্ত কেউ কাজে ফিরে যাবে না।

আলীম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম লিটু বলেন, মিলের শ্রমিকরা না খেয়ে রয়েছে। তাদের পরিবারে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ অবস্থায় শ্রমিকরা বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নেমেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে খালিশপুরে খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকলের নেতারা বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষে বিজেএমসির আঞ্চলিক কার্যালয়ে লিয়াজো কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তিনি কর্মবিরতি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে শ্রমিকরা মজুরি না পেয়ে কাজে যোগদান করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের লিয়াজো কর্মকর্তা গাজী শাহাদাত হোসেন বলেন, শ্রমিকদের পাওনার পরিমাণ ৪০ কোটি টাকা। উৎপাদিত কিছু পণ্য বিক্রি করা হয়েছে। বিক্রির টাকা পাওয়া গেলে পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৮
এমআর/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।