একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সরকার গঠন হতে যাচ্ছে।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে আওয়ামী লীগ। দলটি ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পায়। আর তারা জোটগতভাবে পেয়েছে ২৮৮টি আসন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে মাত্র সাতটি আসন।
নির্বাচনে জয়ের পর সংসদ সদস্যরা ইতোমধ্যেই ৩ জানুয়ারি শপথ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। রাষ্ট্রপতি সরকার গঠনের জন্য শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
সরকার তথা মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একাদশ সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থাভাজন সংসদ-সদস্য শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে গণ্য করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্ধারণ করবেন সেভাবে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন।
তবে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সংখ্যার কমপক্ষে ১০ ভাগের নয় ভাগ সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ পাবেন। সর্বোচ্চ ১০ ভাগের এক ভাগ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে মন্ত্রিসভার সদস্য মনোনীত (টেকনোক্র্যাট) হতে পারবেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর শপথ পড়াবেন। এরপর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের শপথ পড়াবেন। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দফতর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে তারাই হবেন দেশের নতুন সরকার। শপথ নেওয়া পর্যন্ত আগের মন্ত্রিসভা বহাল থাকবে। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে যাবে।
মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করতে আগামী সোমবার (৭ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠিত হবে। শেখ হাসিনা কাদের নতুন মন্ত্রিসভায় নেবেন তাদের শপথ নেওয়ার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ফোন করে আমন্ত্রণ জানানো হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকেই নতুন মন্ত্রীদের গাড়ি, গাড়ির চালক নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
সচিবালয়ে শনিবার সকাল থেকেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা এসেছেন। শপথের জন্য আমন্ত্রণ ও নতুন মন্ত্রীদের দফতর বণ্টন নিয়ে কর্মকর্তারা কয়েক দফা মিটিংও করেছেন। শুক্রবারও (৪ জানুয়ারি) খোলা ছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, সেদিন প্রায় সারাদিনই অফিস করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শনিবার সকাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। আর নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য প্রস্তুতিমূলক কাজ করছে সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা।
এদিকে নতুন মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি সরবরাহের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকারি যানবাহন অধিদফতর। ইতোমধ্যে বেশ কিছু গাড়ি ধুয়েমুছে ঝকঝকে করা হয়েছে। তবে সংখ্যার বিষয়টি জানাননি পরিবহন কমিশনার সৈয়দ আবদুল মমিন।
নতুন মন্ত্রিসভায় কতজন সদস্য থাকবেন তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। কেউ কেউ বলছে এটি ৬০ সদস্যের মধ্যে হতে পারে। অবশ্য ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ১২ জানুয়ারি গঠিত হয় নতুন মন্ত্রিসভা। ওই সময় শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে ৪৮ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। এরমধ্যে ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী এবং দু’জন উপমন্ত্রী ছিলেন। পরে মন্ত্রিসভায় রদবদল ও টেকনোক্র্যাট চারজনকে যুক্ত করে ৫২ সদস্যের কলেবরে হয় মন্ত্রিসভার আকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৯
এমআইএইচ/আরআর