স্বাভাবিকের তুলনায় তার পা দু’টি অনেক ছোট। সেগুলোতে ভর করে দাঁড়াতেও পারেন না।
বলছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজিয়া সুলতানা রুমকি নামের এক সংগ্রামী শিক্ষার্থীর কথা। জন্মগতভাবেই প্রতিবন্ধী তিনি। মায়ের কোলে চড়েই স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এসেছেন।
রুমকি এ বছর ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগে ভর্তি হন। এরপর বিভাগ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে তিনি আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি রাজশাহীর পাঠানপাড়া এলাকায়। বাবা হাফিজুর রহমান একজন পিকআপ ভ্যানচালক। মা নাজনিন বেগম গৃহিণী। দুই ভাই-বোনের মধ্যে রুমকি বড়।
মেয়ের জন্মের পর নাজনীন বেগম কখনোই ভাবেননি যে মেয়েকে পড়ালেখা করাতে পারবেন। কিন্তু পড়ালেখার প্রতি মেয়ের অদম্য ইচ্ছা শক্তি দেখে তাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন।
২০১৬ সালে রাজশাহী বহুমুখী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় ৪ দশমিক ৩৯ এবং ২০১৮ সালে রাজশাহী মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ৪ দশমিক ০৮ পেয়ে পাস করেন। এতদিন মায়ের কোলে চড়েই রুমকি যাতায়াত করতেন।
গত ২১ জানুয়ারি রুমকির বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়। প্রথমদিন ক্লাস করতে আসেন তিনি। বাসা থেকে রিকশা করে মা ক্লাস করাতে নিয়ে আসেন মেয়েকে। রিকশা থেকে নেমে সিঁড়ি পর্যন্ত হুইল চেয়ারে গেলেও বিপত্তি বাঁধে তিন তলায় পৌঁছাতে। ভবনের ওপর তলাগুলোতে উঠার জন্য প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের আলাদা কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মেয়েকে কোলে তুলে নেন মা। সিঁড়ি ভেঙে মেয়েকে নিয়ে তিন তলায় উর্দু বিভাগের ক্লাস রুমে পৌঁছান। ক্লাস শেষ হওয়া পর্যন্ত বাইরে অপেক্ষা করেন। ক্লাস শেষে আবার মেয়েকে কোলে নিয়ে নামেন নিচে।
মেয়েকে ক্লাসে পৌঁছে দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তার মা। মেয়েকে কোলে নিয়ে রোজ নিচতলা থেকে তিন তলায় ওঠা অনেকটাই অসম্ভব। তাই কয়েকদিন আগে কলা অনুষদের ডিনের কাছে বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আবেদন জানিছেন।
এতে কোনো সমাধান না হওয়ায় বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের শরণাপন্ন হন। ভবনের নিচতলায় ক্লাস হয় এমন একটি বিভাগে রুমকিকে স্থানান্তর করে দেওয়ার জন্য আবেদন জানান তার মা।
পরে উপ-উপাচার্য একটা ব্যবস্থা করবেন বলে তাকে আশ্বস্ত করেন এবং বিভাগের সভাপতির সঙ্গে কথা বলতে বলেন। রুমকির মা বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আরবি বিভাগের সভাপতির মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর লিখিত আবেদন জমা দেন।
দেখা গেছে উর্দু ও আরবি দু’টি বিভাগেরই ক্লাস হয় শহীদুল্লাহ কলা ভবনের তিন তলায়। নিচতলায় বাংলা ও ইংরেজি বিভাগের ক্লাস নেওয়া হয়।
নাজনীন বেগম বাংলানিউজকে বলেন, স্যারদের কাছে বিভাগ পরিবর্তনের কথা জানিয়েছি। যদি বাংলাতে পড়ার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে রুমকি স্বাচ্ছন্দে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবে।
তিনি বলেন, যেদিন স্কুলে যাওয়া শুরু করে সেদিন থেকেই ওকে (রুমকি) কোলে করে স্কুলে নিয়ে যাওয়া শুরু করি। আমার বয়সও বেড়েছে। মেয়েকে কোলে নিয়ে তিন তলায় উঠতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠছি।
রুমকি বলেন, আমার জন্য প্রতিদিন ক্লাস করা দুষ্কর। যদি বিভাগ পরিবর্তন করে নিচতলায় বাংলা বিভাগে সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে আমার পড়ালেখা সহজ হবে। নয়তো পড়ালেখাই বন্ধ হয়ে যাবে।
আরবি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নাজিম উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, রুমকির বিভাগ পরিবর্তনের বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। এ বিষয়ে আমি উপাচার্য বরাবর সুপারিশ করেছি।
কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল হক বলেন, রুমকির বিষয়টি জানার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা উপ-কমিটিকে বিভাগ পরিবর্তনের ব্যাপারে জানিয়েছিলাম। কিন্ত উপ-কমিটি বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া বলেন, বিভাগ পরিবর্তনের বিষয়টি সহজ নয়। আপাতত রুমকি ওই বিভাগেই ক্লাস করবেন। তবে উপাচার্য স্যারের সঙ্গে কথা বলে অবশ্যই ওর জন্য একটি ব্যবস্থা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৯
এসএস/এসআরএস