এছাড়াও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের টার্গেটে দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি দৈনিকের সম্পাদকের নামও ছিল। বিবাহ সংক্রান্ত একটি হাদিস পত্রিকায় প্রকাশের জেরে তাকে ‘ইসলামবিদ্বেষী’ উল্লেখ করে হত্যার টার্গেট করেছিল এবিটি’র সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) দিনগত রাতে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এবিটি’র ৪ সক্রিয় সদস্যকে আটক করে র্যাব-১।
আটকরা হলেন- শাহরিয়ার নাফিস ওরফে মো. আম্মার হোসেন (২০), রবিউল ইসলাম ওরফে নুরুল ইসলাম (২৪), রাসেল ওরফে সাজেদুল ইসলাম গিফারী (২৪) এবং আব্দুল মালেক (৩১)। এসময় তাদের কাছ থেকে উগ্রবাদী বই, মোবাইল ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
শুক্রবার (০১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।
তিনি বলেন, গত ২৮ জানুয়ারি সাভারের আশুলিয়া এলাকা থেকে এবিটি’র সদস্য আব্দুস ছোবহান ওরফে হাবিবকে গ্রেফতার করে র্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে এই চারজনকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা এবিটি’র সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকার করেছেন।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আটক শাহরিয়ার ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে দুই বছর বিভিন্ন মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করে। এরপর হাইস্কুলে অধ্যয়ন শুরু করে। ২০১৭ সালে অনলাইনে (ফেসবুক) আমানের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে এবিটি-তে যোগ দেয় শাহরিয়ার। আমানের নির্দেশনায় সে ৪-৫টি ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করে প্রচার-প্রচারণা চালাতো এবং জঙ্গি সদস্য সংগ্রহের কাজ করতো। এভাবে সে ৭-৮ জনকে এবিটি’র সঙ্গে যুক্ত করতে সক্ষম হয়। শাহরিয়ার এবিটি’র টার্গেট কিলিং মিশনের মতাদর্শে উদ্ধুদ্ধ হয়ে অনলাইনে বিভিন্ন অ্যাক্টিভিস্টদের উপর নজরদারি শুরু করে।
তিনি বলেন, শাহরিয়ার ছদ্মবেশে একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘নাস্তিক গ্রুপ’ নামে একটি অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপে ঢুকে। সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপের এক সদস্যকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এই মিশনে শাহরিয়ারসহ সংগঠনের আরও দুই সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ উদ্দেশ্যে গত সপ্তাহে ধারালো অস্ত্রসহ ঢাকা থেকে একজন এবং বরগুনা থেকে একজন বগুড়া যায়। এরপর তারা ওই অ্যাক্টিভিস্ট সদস্যকে তাদের সঙ্গে দেখা করতে বলে। কিন্তু সে দেখা না করায় তাদের মিশন ব্যর্থ হয়ে যায়।
আটক রাসেল সম্পর্কে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ২০১৩ সালে সে এসএসসি পাস করে একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। ফেসবুকে উগ্রবাদী পোস্ট ও ভিডিও দেখে অন্যদের সঙ্গে এ সম্পর্কে আলোচনা করতো। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ফেসবুকের মাধ্যমে অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপে নজরদারির নিয়ন্ত্রক আমানের মাধ্যমে এটিবিতে যোগদানে উদ্বুদ্ধ হয়। সে নিয়ন্ত্রকের নির্দেশনায় বিভিন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ, তাদের কাছে অর্থ সংগ্রহ ছাড়াও সদস্য সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করে আসছিল।
তিনি বলেন, অন্যদিকে রবিউল ইসলাম ২০১০ সালে দাখিল পাস করে। অতঃপর সে বগুড়া পলিটেকনিক্যালে ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়ে ২০১৫ সালে শেষ করে। ২০১৮ সালে শাহরিয়ারের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করে রবিউল। আব্দুল মালেক পেশায় একজন প্রাইভেট গাড়ি চালক। সে ২০১৮ সালে রাসেলের মাধ্যমে এবিটি-তে যোগদান করে।
আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গোপনে তারা সংগঠনকে উজ্জীবিত করার কাজ করে যাচ্ছে। তাদের অন্যতম পরিকল্পনা হচ্ছে সংগঠনের প্রধান জসিমউদ্দিন রহমানীকে (আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান) কারাগার থেকে মুক্ত করা। যদি তারা তাদের নেতাকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্ত না করতে পারে, তাহলে কারাগারে হামলা করে হলেও জসিমউদ্দিন রহমানীকে মুক্ত করবে বলে জানায়। এজন্য তারা এরইমধ্যে অর্থ সংগ্রহ করেছে। তারই একাংশ গ্রেফতারকৃত রাসেলের কাছে জমা ছিল বলে জানা যায়।
তিনি বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের মাধ্যমে বিভিন্ন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, ব্লগাররা ‘টার্গেট অ্যান্ড কিলিং’য়ের ভিকটিম হয়েছে। তারা ছদ্মবেশ নিয়ে যুক্ত হয়ে, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপের সদস্যদের চিহ্নিত করে হত্যার চেষ্টা করছে। এরইমধ্যে একটি প্রথম শ্রেণীর দৈনিকে গত জুলাই মাসে প্রকাশিত বিবাহ সংক্রান্ত হাদিস সম্পর্কে ‘কটূক্তি' উল্লেখ করে ওই সম্পাদককে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা।
এবিটি-কে সক্রিয় করতে তারা সদস্য সংগ্রহের চেষ্টা করে আসছিল। এরইমধ্যে প্রশিক্ষণের জন্য পটুয়াখালীর একটা স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই তাদেরকে আটক করা সম্ভব হলো বলে মনে করেন র্যাবের এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৯
পিএম/জেডএস