ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলাদেশের অন্যতম সমৃদ্ধ বৌদ্ধ স্থাপনা হবে নাটেশ্বর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৯
বাংলাদেশের অন্যতম সমৃদ্ধ বৌদ্ধ স্থাপনা হবে নাটেশ্বর উৎখননে উন্মোচিত বৌদ্ধ মন্দির, স্তূপ, দেয়াল ও নালা। ছবি: বাংলানিউজ

মুন্সিগঞ্জ: মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার নাটেশ্বর গ্রামে উৎখননে উন্মোচিত হয় বৌদ্ধ মন্দির, স্তূপ, দেয়াল ও নালা। ২০১০ সালে মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ীর নাটেশ্বর গ্রামে প্রায় ১০ একর জায়গা জুড়ে শুরু হয় প্রত্নতাত্ত্বিক খনন। 

আগামী ৫ বছর এখানে খনন কাজ শেষ হওয়ার পর আধুনিক পদ্ধতিতে যেভাবে সেসব নিদর্শন সংরক্ষণ করা হবে তা হবে বাংলাদেশে প্রথম। সম্পূর্ণ কাজ শেষে একটি আর্কিওলজিক্যাল পার্ক হবে।

এখানে বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম সমৃদ্ধ বৌদ্ধ স্থাপনা বা পুরাকৃতি স্থান হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।  

সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন জেলা থেকে দর্শনার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এখানে আসছেন। আশপাশের এলাকাবাসীও খুশি বাড়ির পাশে এমন একটি নিদর্শন উন্মোচিত হওয়ায়। প্রায় ১০ একর এলাকাজুড়ে কয়েকটি ধাপে খনন কাজ হয়। ধাপে ধাপে খনন করে বিভিন্ন নিদর্শন পাওয়া গেছে। বর্তমানে নাটেশ্বর খনন করে যেসব নিদর্শন পাওয়া গেছে এগুলো সংরক্ষণ করে স্থানটি ঢেকে রাখা হয়েছে। আরেকটি পয়েন্টে চলছে খননকাজ।  

জানা যায়, এখানে একটি দেয়াল পাওয়া গেছে। যা নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও চীনের  হুনান প্রাদেশিক প্রত্নতত্ত্ব ও সাংস্কৃতিক বস্তু ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা এই খনন কাজে অংশগ্রহণ করেছে। অনেকেরই ভুল ধারণা, বিক্রমপুরের প্রাচীন সভ্যতার প্রায় সব কীর্তি কীর্তিনাশা পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিজ্ঞানসম্মতভাবে গবেষণা ও প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে বিভিন্ন নিদর্শন উন্মোচিত হচ্ছে।  উৎখননে উন্মোচিত পুরাকীর্তি।  ছবি: বাংলানিউজ

চায়না থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে খনন কাজের যন্ত্রপাতি। গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে বৌদ্ধ মন্দির, অষ্টকোণাকৃতি স্তূপ, ৪টি অন্যান্য স্তূপ হলঘর, ইট নির্মিত রাস্তা, কক্ষ, দেয়াল, মেঝে, ইট নির্মিত নালা, অসাধারণ প্রবেশদ্বার প্রভূতি।  

উৎখননে মাটির নিচে বৌদ্ধ বিহারটির সাতটি ভিক্ষু কক্ষ ও একটি হলঘর উন্মোচিত হয়েছে। এখন সম্প্রতি একটি প্রাচীন দেয়াল পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এই খনন কাজ পরিচালিত হচ্ছে।  

নাটেশ্বর খনন কাজের এখানে পাওয়া গেল গবেষণা পরিচালক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমানকে। সম্প্রতি রামপাল এলাকায় বল্লালসেনের রাজপ্রাসাদের খোঁজ তার মাধ্যমেই মেলে।  

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এখানে (নাটেশ্বর) আর্কিওলজিক্যাল পার্ক হবে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে একটি পয়েন্টে খননকাজ চালাচ্ছি। যা মার্চের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চলবে। যার মধ্যে একটি বড় দেয়াল পেয়েছি। এ ব্যাপারে শিগগির বিস্তারিত জানানো হবে বলেও জানান তিনি।  

উৎখননে উন্মোচিত দেয়াল।  ছবি: বাংলানিউজসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে যে "মন্দির নগরী" পাওয়া গেছে বাংলাদেশের কোথাও আর এরকম পাওয়া যায়নি। ভারতের স্বাচীতে মহাদেশের সবচেয়ে বড় স্তূপা আছে। গত বছর এখানে একটি বড় বাহু পাওয়া গিয়েছিল, এবছর আরেকটি বাহু পাওয়া গিয়েছে। এখান থেকে অনুমিত হয় স্বাচীর মতো এখানেও একটি বড় আকারের স্তূপা আবিষ্কার হতে চলেছে। স্তূপা, মন্দির, চারটি করে ১৬টি আলাদা স্তূপা, হাজার বছর আগের রাস্তা, পানি নিষ্কাশন নালা ইত্যাদি এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব থেকে বোঝা যায়, এখানে একটি উন্নত নগর সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। পুরোটা আবিষ্কৃত হয়ে যাওয়ার পরে ধারণা করা যায়, এখানে বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম সমৃদ্ধ বৌদ্ধ স্থাপনা বা পুরাকৃতি স্থান হবে। এটিকে ইউনেস্কো'র বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেবে বলে দেশি ও চীনা গবেষকদের ধারণা।  

অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও প্রকল্প পরিচালক নূহ-উল-আলম লেনিন বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে এ খননকাজ। আশা করা যায় আগামী ৫ বছরে খননকাজ শেষ হলে বাংলাদেশের মধ্যে আধুনিকতম সংরক্ষণের ব্যবস্থা হবে। ইতোমধ্যে তার খসড়া মডেল তৈরি প্রক্রিয়াধীন আছে। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে এটি একটি আর্কিওলজিক্যাল পার্ক হবে। এটি বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থান হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।