শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে অনুষ্ঠিত হলো ঘুড়ি উৎসব। সেখানে বাংলার ঐতিহ্য ঘুড়িকে ধারণ করা আর সৈকতকে নির্মল রাখার শপথ নিলেন ঐতিহ্যপ্রেমীরা।
বিকেলে সুগন্ধা বিচে বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারশেনের আয়োজনে জাতীয় ঘুড়ি উৎসব উদ্বোধন করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং ঝু।
প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা ঘরবন্দি হয়ে যাচ্ছে। তাদের নির্মল আনন্দের ছোঁয়ায় আনতে হবে। প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক ঘুড়ি তার একটি অন্যতম মাধম হতে পারে।
কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতকে বিপন্নতা থেকে রক্ষা করতে পরিবেশপ্রেমীদের সচেতনতামূলক কার্যক্রমের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং ঝু বলেন, এমন আয়োজনে উপস্থিত হতে পেরে আমি আনন্দিত। বাংলাদেশের অনেক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আছে। তারই ধারাবাহিকতায় এ আয়োজন অনন্য।
আয়োজনে আরো উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন, বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারশেনের সভাপতি শাহজাহান মৃধা বেণুসহ অন্যান্য বিশিষ্ট জনেরা।
মূল আয়োজন শুরু হওয়ার আগেই সুগন্ধা বিচে নিয়ে আসা হয় ২৫ ফুট দীর্ঘ বিরাট টেরাকোটা টেপা পুতুল। সৈকত সাজানো হয় ছোট বড় নানান পতাকা আর বেলুনে। আয়োজনের উদ্বোধন হতেই সৈকতে আসা পর্যটকের দল জলকেলি ভুলে মেতে ওঠেন ঘুড়ি উৎসবে। নানান রঙের ঘুড়ি উড়িয়ে সব বয়সের ঘুড়ি প্রেমীরা নীল আকাশ করে তোলেন ঘুড়ির রঙে বর্ণিল।
এবারের আয়োজনে বেসাতি, ড্রাগন, ডেল্টা, বহুবিধ বক্স, মাছরাঙা, ঈগল, ডলফিন, অক্টোপাস, সাপ, ব্যাঙ, মৌচাক, কামরাঙা, গুবরেপোকা, আগুনপাখি, পেঁচা, ফিনিক্স, জেমিনি, চরকি, পালতোলা নৌকা, সাইকেল, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কুকুর, হাতি, ফুটবলসহ বিভিন্ন ধরনের ঘুড়ি ওড়ানো হয়।
আয়োজনে কথা হয় ঘুড়ি প্রেমী শামান্তা রিমুর সঙ্গে। ঘুড়ি ওড়াতে ওড়াতে তিনি বলেন, প্রথম বার কক্সবাজার এলাম, তাও আবার ঘুড়ি উৎসবে। এতো কালারফুল ঘুড়ি আমি আগে একসঙ্গে কখনও দেখিনি।
ঘুড়ি নিয়ে হাঁটছিলেন সারা খন্দকার। ঢাকা থেকে তিনি এসেছেন ঘুড়ি ওড়াতে। তবে এবারই তার ঘুড়ি ওড়ানো প্রথম। কথা হলে বলেন, ছোট থেকেই ঘুড়ি ওড়ানোর অনেক ইচ্ছে আমার। তবে পারিবারিক বিভিন্ন কারণে সে সুযোগ হয়নি কখনও। আজ এখানে এসে ঘুড়ি ওড়াবো ভেবে বেশ আনন্দ লাগছে। কিন্তু আমি ঘুড়িটা ওড়াতে পারছি না। কারো সাহায্য দরকার।
সারা’র ঘুড়ি আকাশে ওঠাতে ওঠাতেই কথা হয় পুরান ঢাকা থেকে আসা নাঈম আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঢাকায় ঘুড়ি ওড়ানোর পরিবেশ নেই বললেই চলে, তাই সুযোগই হয় না। আর এজন্যই শুধু ঘুড়ি ওড়াতে চলে এসেছি এতোদূর।
বিভিন্ন জনের নানান রঙের ঘুড়ির ওড়ার মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী দিনের শেষে সমুদ্র সৈকতে ছিল বাংলার বাঘ রক্ষার আয়োজন ‘বাঘ ছানার নৃত্য’ ও ফানুস ওড়ানোর আয়োজন।
উৎসবের দ্বিতীয় দিনে নৃত্যরত বিশাল হাওয়াই মানুষ, ভয়ঙ্কর ড্রাগন, আকর্ষণীয় চরকি, ঘুড়ি, ফানুস, বাঘ ছানার নৃত্য, এয়ারশিপের মতো অনেক রকম ডিসপ্লে আইটেমের আয়োজন থাকবে বিকেলে। শনিবার রাতে বাংলা বৈরী দানবদাহনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে জমকালো ঘুড়ি উৎসব।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৯
এইচএমএস/এসআই