ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পুনর্বাসন দাবি বুড়িগঙ্গাপাড়ের ক্ষতিগ্রস্তদের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৯
পুনর্বাসন দাবি বুড়িগঙ্গাপাড়ের ক্ষতিগ্রস্তদের বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় দখলমুক্ত করতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: সর্বস্ব হারিয়েও বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় দখলমুক্ত করতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কামরাঙ্গীরচরের খোলামুড়া ঘাট থেকে ফ্যান ফ্যাক্টরি পর্যন্ত তিন দিনের অভিযানে ৪৪৫টি স্থাপনায় ছোট-বড় প্রায় দেড় হাজার অবৈধ কারখানা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার মানুষ।

মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) এ অভিযান চলবে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। অভিযান পরিচালনায় যথেষ্ট সময় না দেওয়ায় ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মাত্র একদিনের নোটিশে তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। উচ্ছেদের সময় মালামাল সরিয়ে নেওয়ার সুযোগও দেওয়া হয়নি। ফলে অনেকের আয়ের একমাত্র উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে লাখ লাখ টাকা। ভাড়াটিয়ারা দোকান নেওয়ার জন্য মালিককে দেওয়া অগ্রিম টাকা ফেরত পাবে কিনা না তা নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়। এখন সরকারের কাছে তাদের একটাই দাবি, তাদের যেন ক্ষতিপূরণ দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়।

সরেজমিনে খোলামুড়া ঘাটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অভিযানে ভেঙে ফেলা হয়েছে সরকারি জায়গায় গড়ে ওঠা বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বহুতল ভবন। উচ্ছেদ করা হয়েছে দেড় হাজার ছোট-বড় কারখানাসহ দোকানপাট। এর মধ্যে স'মিল,  নুডলস, চকলেট, বেকারি, প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ও জুতার কারখানা রয়েছে। এছাড়া টিএনটি ভবন, আবাসিক বহুতল ভবন, মাদরাসা, মসজিদসহ এ তালিকায় হাজি সেলিমের রড সিমেন্টের গোডাউনও রয়েছে। গতবছর এ অভিযান পরিচালনা করার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীরা উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ আনার কারণে পারেনি।  বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় দখলমুক্ত করতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ।  ছবি: বাংলানিউজভাড়াটিয়া হাফিজুর রহমান ও শৈলেন মজুমদার বাংলানিউজকে জানান, ১০ বছর আগে ২০ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে দোকান ভাড়া নেন। তাদের একমাত্র আয়ের পথ ছিল এ দোকান। অবৈধ জায়গায় হওয়ায় নদী রক্ষা অভিযানে ভাঙা পড়েছে। ফলে আয়ের পথ বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি অগ্রিম নেওয়া টাকা ফেরত পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

উচ্ছেদ অভিযানে ভেঙে দেওয়া জোড়া হাতি অ্যালুমিনিয়ামের মালিক সোহাগ বাংলানিউজকে বলেন, সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অবশ্যই ভালো। নদী দূষণমুক্ত হলে সবার জন্য ভালো।  

দিনমজুর মো বাবুল ও লতিফ বাংলানিউজকে জানান, খোলামুড়া ঘাটে ৮ থেকে ১০ বছর ধরে কাজ করেন। নদী রক্ষার জন্য উচ্ছেদ অভিযান সরকারের ভালো উদ্যোগ। তারপরও আমাদের মতো গরিবরা কি করবে। এখন পরিবার কীভাবে চালাবো জানি না। আমাদের পুনর্বাসন করে এ অভিযান পরিচালনা করলে ভালো হতো।

এ বিষয়ে বিআইডাব্লিউটিএ’র পরিচালক শফিকুল হক বাংলানিউজকে বলেন, মোট ১০ দিনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আমরা অভিযান শুরু করেছি। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এ অভিযানে এরমধ্যে আমরা সাতটির মতো বহুতল ভবন ও ছোট-বড় অসংখ্য স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। শুক্রবার আর শনিবার বিরতি দিয়ে রোববার থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অভিযান নিয়মিত চলবে।

বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় দখলমুক্ত করতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ।  ছবি: বাংলানিউজতিনি বলেন, কেবল উচ্ছেদ নয়, নজর দেওয়া হচ্ছে নদীদূষণের দিকেও। অনেকেই নদীর পাড়ে বর্জ্য ফেলছেন। ইতোমধ্যে আমাদের সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালত যুক্ত হয়েছে। তারা অনেককে জরিমানা করছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত মালিক আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। ফৌজদারি মামলা দায়েরের পরিকল্পনাও আছে।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র থেকে জানা যায়, ঢাকার জীবিত একমাত্র জলাশয় বুড়িগঙ্গার সৌন্দর্যবর্ধন ও দখল এড়াতে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছ সরকার। এ লক্ষ্যে সদরঘাট-গাবতলী রুটে অবৈধভাবে দখল করা জায়গা উদ্ধারের জন্য মাঠে নেমেছে বিআইডাব্লিউটিএ। এতে কাঁচা-পাকাসহ মোট ৬০৯টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এর মধ্যে ৫৬টি বহুতল রয়েছে।  

উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার পরেও উচ্ছেদ অভিযান কেন পরিচালনা করা হচ্ছে জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, সরকার তাদের সত্যিকারের স্থগিতাদেশ দিলে সরকার অভিযান পরিচালনা করাতো না। আমরা কোর্টের কাগজপত্র পরীক্ষা করেই এ অভিযান পরিচালনা করতে এসেছি। সুতরাং, এগুলো ভিত্তিহীন কথাবার্তা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৯
জিসিজি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।