ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

২ বছরেও শুরু হয়নি সাংবাদিক শিমুল হত্যার বিচার

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৯
২ বছরেও শুরু হয়নি সাংবাদিক শিমুল হত্যার বিচার

সিরাজগঞ্জ: আলোচিত সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যার দু’বছর। ২০১৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুরে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান দৈনিক সমকালের স্থানীয় প্রতিনিধি আবদুল হাকিম শিমুল। 

আলোচিত এ হত্যা মামলার দু’বছর পার হলেও বিচার শুরু হয়নি। এখন পর্যন্ত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়নি।

দফায় দফায় পরিবর্তিত হচ্ছে অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখ।  

এ হত্যাকাণ্ডের পরপরই প্রধান আসামি পৌরসভার মেয়র (সাময়িক বহিষ্কৃত) হালিমুল হক মীরুসহ অন্যান্য অধিকাংশ আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে মামলাটি শাহজাদপুর আমলি আদালত থেকে জেলা জজ আদালতে স্থানান্তরিত হয়। এরপর অতিরিক্ত জেলা জজ (দ্বিতীয়) আদালতে স্থানান্তর করা হয়।  

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে নিহত সাংবাদিক শিমুলের স্বজন এবং স্থানীয় সংবাদকর্মীরা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিতে জোর দাবি জানিয়ে আসলেও এখনো সে দাবি পূরণ হয়নি।

অতিরিক্ত জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতের সরকারি সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট শামসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, মামলার প্রধান আসামি মীরু কারাগারে অসুস্থতার কথা বলে বিগত তারিখে আদালতে হাজির না করায় চার্জ গঠনের শুনানি হয়নি। আসামি অনুপস্থিত থাকার কারণে বার বার পিছিয়েছে চার্জ গঠনের শুনানির তারিখ। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) অভিযোগ গঠনের শুনানির পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে।

নিহত শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম বাংলানিউজকে বলেন, গত দুই বছরেও আমার স্বামী হত্যার বিচার না হওয়ায় উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছি। মামলার প্রধান আসামি শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র মীরু দু’বছর ধরে কারাগারে থাকলেও তার সহোদর হাবিবুল হক মিন্টুসহ চার্জশিটভুক্ত বাকি ৩৭ আসামি জামিনে মুক্ত আছেন। মীরুকেও জামিনে মুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। প্রধান আসামি মীরু জামিনে মুক্ত হলে আমরা হয়তো আর বিচারই পাব না।

তবে মেয়র মীরুর ছোট ভাই হাবিবুল হক পিন্টুসহ আসামিপক্ষের দাবি, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটিকে পরিকল্পিতভাবে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে দু’বছর ধরে কারাবন্দি রয়েছেন নির্দোষ মেয়র হালিমুল হক মীরু।  

পিন্টু বাংলানিউজকে বলেন, মেয়রের বাড়িতে হামলা ও সংঘর্ষের সময় সাংবাদিক শিমুল গুলিবিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি আমাদের পক্ষেরও চারজন গুলিবিদ্ধসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিল। সুষ্ঠু তদন্তে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে কারা হামলা করেছে, কাদের গুলিতে শিমুলসহ আমাদের চারজন গুলিবিদ্ধ হলো সে রহস্য উদঘাটন হবে।

শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি বিমল কুন্ডু বাংলানিউজকে বলেন, সংবাদকর্মীদের দাবির প্রেক্ষিতে জেলা (ডিসি) প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা গত বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের লক্ষ্যে সুপারিশ করেন। কিন্তু আজও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি আসেনি। অবিলম্বে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করে বিচার কার্যক্রম শুরুর দাবি জানান এ সাংবাদিক নেতা।

গত ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে মেয়র মীরুর বাড়ির সামনে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গুলিবিদ্ধ হন সাংবাদিক শিমুল। পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম বাদী হয়ে মেয়র হালিমুল হক মীরু, তার ভাই হাবিবুল হক মিন্টুসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ্য ও অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২২ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ৩৮ জনকে অভিযুক্ত করে ২০১৭ সালের ২ মে শাহজাদপুর আমলি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। তবে দেড় বছরেও অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়নি।

শিমুল হত্যার দ্বিতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে শোক র‌্যালি ও স্মরণ সভা: 
শিমুল হত্যার দ্বিতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে শাহজাদপুরে কর্মরত সাংবাদিকরা। দিনটি উপলক্ষে রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ, শিমুলের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, শোক র‌্যালি ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে।  

এছাড়াও বাদ জোহর শাহজাদপুর মখদুমিয়া জামে মসজিদ, টাউন মসজিদ ও মাদলা জামে মসজিদে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৯
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।