ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এবার খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধেও আসছে জোরালো অভিযান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৯
এবার খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধেও আসছে জোরালো অভিযান বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

ঢাকা: খাদ্যে ভেজাল দেওয়াকে ‘কিছু মানুষের চরিত্রগত বদভ্যাস এবং এক ধরনের দুর্নীতি’ হিসেবে উল্লেখ করে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে এর বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ভেজাল বন্ধে আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় আমরা তা করবো।

রোববার (০৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস-২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী একথা জানান।

 বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে দেশে প্রথমবারের মতো দিবসটি পালন করা হচ্ছে।  

সব ধরনের খাদ্যে ভেজালবিরোধী অভিযান জোরদার করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন আমরা ইতোমধ্যে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। সেখানে আমরা সফলতা অর্জন করেছি। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। দুর্নীতির বিরুদ্ধেও- এই ভেজাল দেওয়া এটা এক ধরনের দুর্নীতি। কাজেই দুর্নীতির বিরুদ্ধেও আমরা আমাদের অভিযান চালাচ্ছি। ভেজালের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, এটা অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, হাটে-মাঠে-ঘাটেও যেন এই ভেজালবিরোধী অভিযানটা অব্যাহত থাকে- তার ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি। ভবিষ্যতে আরও নেবো।

নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ছবি: পিআইডিভেজালের বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জনবল সংকট দূর করার উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের লোকবলের সমস্যা আছে, আমরা তা দূর করে দেবো।

ভেজালের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভেজালবিরোধী অভিযান চলছে সেটাকে আরো ব্যাপকভাবে করবার জন্য আপনারা জানে যে আমরা আলাদাভাবে একটা কর্তৃপক্ষই করে দিয়েছি। সুস্বাস্থ্যের মানুষ তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় মিলে আমরা কর্তৃপক্ষ করে দিয়েছি।

ভেজাল বন্ধে নাগরিক সচেতনতার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ সচেতন হলে কেউ খাবার নিয়ে জনগণকে ঠকাতে পারবে না।

তিনি বলেন, দোকানের খাবার, হোটেল রেস্তোরাঁর খাবার বিভিন্ন খাবারে যে ভেজাল বা বাসি পঁচা খাবার বা বিভিন্ন ঘটনাগুলো ঘটনো হচ্ছে সেগুলো ব্যাপারে সবাইকে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। এখানে নাগরিক সচেতনতা একান্তভাবে প্রয়োজন। এর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের আরও তৎপর হতে হবে।

ভেজাল মুক্ত নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এটা (ভেজাল) আমরা দূর করবো। কোনো বিষক্রিয়ায় আমাদের দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হোক সেটা আমরা চাই না।

তিনি বলেন, ভেজাল করে মানুষের ক্ষতি করা, মানুষের জীবন ধ্বংস করা; এটার অধিকার কারো নেই।

খাদ্যে ভেজাল সৃষ্টিকারীদের ভৎর্সনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি ভবিষ্যতে এসব ক্ষেত্রে মানুষকে সচেতন করা দরকার। যে আপনি কেন ভেজাল দিয়ে বিক্রি করবেন। আপনি ভালোটাই বিক্রি করেন, আপনার যে দাম পড়ে সেই দাম নেন। লাভ নিতে চান লাভও নেন। কিন্তু যেটা করবেন ভালোভাবে করবেন। ভেজাল করা যাবে না।

ভেজাল বন্ধে হচ্ছে খাদ্য পরীক্ষার ‘বিশেষ ল্যাবরেটরি’

ভেজাল বন্ধে খাদ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ‘বিশেষ ল্যাবরেটরি’ প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অন্যান্য জিনিসগুলো টেস্ট করার জন্য বিএসটিআইকে আমরা আধুনিক ও উন্নত করেছি। কিন্তু আলাদাভাবে খাদ্য পরীক্ষার জন্য বিশেষ ল্যাবরেটরি একান্তভাবে প্রয়োজন এবং সেই ল্যাবরেটরি আমরা করে দেবো।

খাদ্য পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে ও বিভাগীয় পর্যায়ে এই ‘বিশেষ ল্যাবরেটরি’ প্রতিষ্ঠা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের একটা কেন্দ্রীয় ল্যাবরেটরি থাকবে পাশাপাশি প্রত্যেকটা বিভাগেও ল্যাবরেটরি থাকবে। যাতে যেকোনো সময় আমরা যেকোনো খাদ্য সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করে দেখতে পারি।

উদ্বোধন শেষে কেআইবি প্রাঙ্গণে নিরাপদ খাদ্য মেলা ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী।   ছবি: পিআইডিএ সময় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি খাদ্য সংরক্ষণের বিষয়েও কাজ করছে। উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের ভর্তুকিসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া মানুষের খাদ্য নিশ্চিতের পাশাপাশি পুষ্টিহীনতা দূর করতেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে বিশ্বের চতুর্থ, সবজিতে তৃতীয় এবং মৎস্য উৎপাদনেও আমরা আমাদের দেশে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশীয় মাছ উৎপাদনে গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হযেছে। ডিম-মাংস উৎপাদনেও বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছি আমরা। আমিষ জাতীয় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কাজ করা হচ্ছে।  

তিনি বলেন, খাদ্য চাহিদা কখনও শেষ হয়ে যায় না। যেহেতু আমাদের জমি বেশ উর্বর সেজন্য আমরা ফসল ফলনে নানা ধরেনের নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়েছি।

আগামীতে ২৭ লাখ মেট্রিকটন খাদ্য মজুদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।  

এবারের নিরাপদ খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সুস্থ-সবল জাতি চাই, নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নাই’। এই প্রতিপাদ্যের প্রশংসাও করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহাবুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নিরাপদ খাদ্য নিয়ে ক, খ ও গ বিভাগে যথাক্রমে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় প্রতিটি বিভাগে প্রথম তিনজনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

উদ্বোধন শেষে কেআইবি প্রাঙ্গণে নিরাপদ খাদ্য মেলা ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী।  

বাংলাদেশ সময়: ১২২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৯/আপডেট: ১৪২৩ ঘণ্টা
এমইউএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।