এবারও তাই হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই পদ্মা এখন পানিশূন্য।
আর বিশাল বালুরাশির ওপর দিয়ে চলছে গরু-মহিষের গাড়ি। অথচ বছর দশেক আগেও এই সময়ে পদ্মায় জোয়ার থাকতো। এখন তা শুধুই স্মৃতি। দিনে দিনে পানিরাশির অপার সৌন্দর্য্য হারিয়ে পদ্মা এখন শুধুই মরুভূমি। তবে পদ্মার জেগে ওঠা সেই চরও এবার আশার সঞ্চার ঘটিয়েছে। নিজের বুকটাকে যেন উজাড় করে দিয়েছে। তাই বালুর চরও এরইমধ্যে শস্য শ্যামলা হয়ে উঠেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, পদ্মার ধূ-ধূ বালুচরে এখন কেবলই সবুজের সমারোহ। রাজশাহীর পদ্মা গার্ডেনের নিচ থেকে শুরু করে পশ্চিমে একেবারে শ্রীরামপুর এলাকা পর্যন্ত শত শত হেক্টর জমিতে এবার বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলানো হয়েছে।
যেদিকে যতদূর চোখ যায় কেবলই সবুজ। মরা পদ্মার বুক চিরে যেন ফল ও ফসলের বিপ্লব ঘটে গেছে। গেল ভাঙনের স্রোতে জমা পড়েছে পলিমাটি। তাতেই উর্বর আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে নদীর বুকে জেগে ওঠা চর। সেখানে বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন নদীভাঙা মানুষগুলো।
কীর্তিনাশা পদ্মার গ্রাসে ঘর-বাড়ি হারা নিঃস্ব মানুষগুলো আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। অভাব অনটনের ঘেরাটোপে বন্দি জীবনটাকে আবার বদলে দিতে চাইছেন। অক্লান্ত পরিশ্রমে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন। চরে জন্মানো আগাছা কেটে, তৈরি করা হয়েছে আবাদি জমি। সেখানে রীতিমতো চাষ হচ্ছে ধান, গম, ভুট্টা, মসুর, মটর, পেঁয়াজ, রসুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, টমেটো, শিমসহ নানা ধরনের শাকসবজি। ফলে বেড়েছে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।
পবার মধ্যচরের চাষি আফাজ উদ্দিন বলেন, গেলো বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বাপ-দাদার বসত-ভিটা হারান চরাঞ্চলের অনেক মানুষ। জীবন ও জীবিকার লড়াইয়ে বিভিন্ন স্থানে চলে যায় অনেক পরিবার। তবে নদীতে চর পড়ায় তারা আবারও ফিরে এসেছেন। দিন-রাত এক করে চরের বুকে ফসলের আবাদ শুরু করেছেন।
পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় শ্যালো মেশিন বসিয়ে নদীবক্ষ থেকে পানি তুলে সেচ দিয়েছেন। পরিত্যক্ত চরে ফলিয়েছেন সবুজ ফসল।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, রাজশাহী জেলার পদ্মার চরে ৪ হাজার ৩২৭ হেক্টর জমিতে এবার বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ হচ্ছে। এ বছর রাজশাহী জেলার পবা, গোদাগাড়ী, বাঘা ও চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন চরের কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে।
পদ্মার চরে ডাল ফসল মশুর ৯২৫ হেক্টর জমিতে, সরিষা ৩৫০ হেক্টর জমিতে, সবজি জাতীয় ফসল ৫৫০ হেক্টর জমিতে, ভুট্টা ৫২৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এছাড়া গম ৩৭৫ হেক্টর, মসলা জাতীয় ফসল ৭২৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ ৫০০ হেক্টর ও আলু চাষ হয়েছে ৩৭৫ হেক্টর জমিতে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, আগে পদ্মার চরে হাতেগোনা কয়েকটি ফসল ফলতো। কিন্তু তারা চরের কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছেন।
বিভিন্ন সময় মাঠ দিবসের আয়োজন করছেন। তাই সময়ের পালাবদলে বর্তমানে ছয় থেকে সাত ধরনের ফসল হচ্ছে পদ্মার জেগে ওঠা চরে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় লাভও বেশি।
ফসল বিশেষ মাত্র দু’বার সেচ লাগে। তাই পদ্মার বিস্তীর্ণ চর এখন শস্যভূমিতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৯
এসএস/জেডএস