ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অজ্ঞাত রোগ: এক সপ্তাহে পল্লী চিকিৎসকসহ ৬ জনের মৃত্যু

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৯
অজ্ঞাত রোগ: এক সপ্তাহে পল্লী চিকিৎসকসহ ৬ জনের মৃত্যু .হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়নের বহরইল গ্রামে হঠাৎ করে ‘অজ্ঞাত রোগে’ আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এ নিয়ে গত একসপ্তাহে ওই গ্রামে পল্লী চিকিৎসকসহ পরপর ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন আরও ছয়জন। 

তবে কী কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে বা সবার মৃত্যু একই রোগে কি-না তা এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সোমবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) মাঠে নেমেছেন তারা।

এরই মধ্যে ওই গ্রাম পরিদর্শন করতে ঢাকা থেকে একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল রাজশাহী পৌঁছেছে। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চিকিৎসক দলটি তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ছয়জনের সঙ্গে কথা বলেছে।  

দুপুরে ওই গ্রাম পরিদর্শনে যাওয়ার কথাও রয়েছে দলটির। পরিদর্শন শেষে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলার কথাও জানিয়েছেন দলটির সদস্যরা।

জানা গেছে, চিকিৎসক দল গ্রামের কিছু মানুষের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। এরপরই নিশ্চিত হওয়া যাবে আসলে কী রোগে তাদের মৃত্যু হয়েছে। তাই এর আগে বিষয়টি নিয়ে অহেতুক আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা থেকে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।  
রাজশাহীর তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রোজিয়ারা খাতুন বলেন, সর্বশেষ গতকাল রোববার (০৩ ফেব্রুয়ারি) এক পল্লী চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত পল্লী চিকিৎসকের নাম ইমাম আলী বাবু (৩৮)। তিনি বহরইল গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে। রোববার ভোরে তিনি নিজ বাড়িতে মারা যান। এ নিয়ে ওই গ্রামে গত এক সপ্তাহে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।  

গত সপ্তাহের শনিবার (২৬ জানুয়ারি) নুরী বিবি (৬৫), জনাব আলী (৪৫) ও চারদিনের এক নবজতাক শিশু মারা যায়। এর একদিন পর সোমবার (২৮ জানুয়ারি) সমসের আলী (৬৫) এবং চলতি সপ্তাহের শনিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) রাহেলা বেগম (৪৮) নামের আরও এক গৃহবধূ মারা যান।  

আর অসুস্থ হয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছেন ওই গ্রামের জামেনুর রহমানের স্ত্রী শেফালি বিবি (৩৫), মৃত আনেসুর রহমানের স্ত্রী সেমেজান বিবি (৫০), আব্দুল গাফফারের স্ত্রী আপেজান বিবি (৪৮) ও দাউদ আলীর স্ত্রী বাদেনুর খাতুন (৩৫)।  

তাদের রোববার (০৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আর রোববার রাতে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে ওই গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে জিয়াউল হক জিয়া (২৫) ও আব্দুল হকের ছেলে সানাউল্লাহকে (৩২)।  

অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত এবং বহরইল গ্রামের স্থানীয় অধিবাসীদের বরাত দিয়ে টিএইচও ডা. রোজিয়ারা খাতুন বলেন, সুস্থ্য মানুষের হঠাৎ করে বুক জ্বালা, শরীরে ব্যথা ও খিঁচুনি শুরু হচ্ছে। এরপর জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। মারা যাওয়া ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনেরই মৃত্যু হয়েছে একইভাবে।

তিনি বলেন, ১০ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বহরইল গ্রামে গিয়ে মৃত্যুর কারণ ও নমুনা সংগ্রহ করেছে। তারা গ্রামবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।  

এছাড়া পল্লী চিকিৎসক মারা যাওয়ার খবর পেয়ে সোমবার সকালে সেখানে ছুটে যান রাজশাহী জেলা প্রশাসক এস এম আবদুল কাদের ও রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. সঞ্জিত কুমার সাহা।

রাজশাহীর তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) চৌধুরী মোহাম্মদ গোলাম রাব্বী বলেন, বহরইল গ্রামে গত একসপ্তাহে ছয়জনের মৃত্যু ও বেশ কয়েকজন অসুস্থ্য হয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তারা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন। ঢাকা থেকে একটি বিশেষজ্ঞ টিম আজ সেখানে গেছেন। তারা ওই গ্রাম পরিদর্শন শেষে প্রাথমিক ধারণাটা দেওয়া যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৯
এসএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।