উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের ৯৪ কিলোমিটার মহাসড়কের ওপর দিয়ে যাতায়াত করে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যানবাহন। হাটিকুমরুল গোলচত্বরকে কেন্দ্র করে জেলার চারটি মহাসড়কই দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত।
এছাড়াও রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে আঞ্চলিক সড়কগুলোতেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাতে হচ্ছে অনেককেই।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩ মাসে জেলার চারটি মহাসড়কে ৫৫টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭০ জন। অপরদিকে আঞ্চলিক সড়কগুলোতে ২৩টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৩ জন। এসব দুর্ঘটনায় ৩৯৬ জন আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন। আবার কেউবা স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ববরণ করে অসহায় জীবনযাপন করছেন।
এ হিসেবে অনুযায়ী সিরাজগঞ্জে প্রতি মাসে গড়ে ৭ দশমিক ১৫ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন। এর মধ্যে গত বছরের জুন মাসে সর্বোচ্চ নয়টি দুর্ঘটনায় ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। আহত হন ৯২ জন। এ পরিসংখ্যানের বাইরেও ছোটখাটো অনেক দুর্ঘটনা ঘটে যেগুলো স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি হয়। ফলে মিডিয়া ও পুলিশ প্রশাসনের সেগুলো নজরে আসে না।
পুলিশ, পরিবহণ শ্রমিক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চালকদের অদক্ষতা, ক্লান্ত কিংবা তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় গাড়ি চালানো, বেপরোয়া ওভারটেকিং, ট্রাফিক নিয়ম না মানা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহাসড়কে অনুনোমদিত থ্রি-হুইলার পরিবহণ চলাচল, যত্রতত্র পুলিশি তল্লাশিসহ মহাসড়কে নানা অব্যবস্থাপনার বিষয়টি উঠে আসে। যাত্রী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি দুর্ঘটনার মূল কারণ চালকদের অদক্ষতা, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো।
অপরদিকে চেকিংয়ের নামে পুলিশি হয়রানি, রাস্তাঘাটের বেহাল দশার পাশাপাশি নিজেদের দায়ও স্বীকার করেন চালকেরা।
সয়দাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নবিদুল ইসলাম, নলকা মোড়ের বাসিন্দা সুলতান, ব্যবসায়ী সাকলাইনসহ অনেকেই বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম গোলচত্বর পার হওয়ার পর চালকরা বেপরোয়া হয়ে যায়। ওভারটেকিংয়ের প্রতিযোগিতায় নামে তারা। এ কারণেই এ মহাসড়কটিতেই সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় অনেকেরই দাবি মহাসড়কে কোনো শৃঙ্খলাই নাই। অনুমোদনহীন থ্রি-হুইলার পরিবহণ, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সাধারণ ভ্যান-রিকশা, শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ভটভটি চলাচল অব্যাহত রয়েছে। এসব যানবাহনও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
কথা হয় বাস চালক আসাদউল্লাহ, রাজ্জাক মিয়া, ট্রাক চালক ওসমান ও রফিকুলের সঙ্গে। তাদের দাবি একে তো সড়কের অবস্থা বেহাল, তার ওপর কাগজপত্র দেখার নাম করে মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে পুলিশি তল্লাশি চালানো এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।
নিজেদের দায় স্বীকার করে চালকরা আরও বলেন, ২-৩ মাস হেলপারি (সহকারী) করেই চালক হয়ে যায়। বিআরটিএ তাদের লাইসেন্স দিয়ে দেয়। ওরা সড়ক-মহাসড়কের কি বুঝবে। কোনো নিয়মনীতি না মেনেই তারা বেপরোয়া গাড়ি চালায়। আগে ওঠার জন্য তাড়াহুড়ো করে। যার ফলে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের রাজশাহী বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী বাংলানিউজকে বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি লক্কড়-ঝক্কর গাড়ি, রাস্তার বেহাল অবস্থাই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। শ্রমিকদেরও কিছুটা দায় রয়েছে। তবে মালিক যদি গাড়ির ফিটনেস ঠিক রাখে তবে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমবে বলে মনে করেন তিনি।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী বাংলানিউজকে বলেন, নানা কারণেই মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটে। পরিবহণে যান্ত্রিক ত্রুটি, চালকদের বেপরোয়া ড্রাইভিং, ওভারটেকিং ও ড্রাইভিংয়ের সময় তন্দ্রাভাবের কারণেই বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।
এছাড়াও প্রাকৃতিক কারণ, যেমন ঘন কুয়াশা, অতিবৃষ্টিতে পিচ্ছিল রাস্তাঘাটের কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে। চালক-মালিকসহ সব মানুষ সচেতনতাই দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৯
জিপি