হঠাৎ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ১৯৮৬ সালে গ্রামের সরকার বাড়ির সঙ্গে আজইরা বাড়ির লোকজনের সংঘর্ষ হয়। পাল্টে যায় সবকিছু।
আছিয়া সরকারবাড়ির বধূ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ঝগড়ার জেরে আমার বাড়িঘর ভেঙ্গে সব জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায় প্রতিপক্ষ। বাড়ির ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছু ছিল না। দিনে ও রাতে প্রতিনিয়ত আক্রমণ করতো ওরা।
আছিয়ার মতো সরকার বাড়ির আরো শত শত নারী-পুরুষ-শিশু গ্রাম্য ঝগড়ার জেরে এলাকা ছাড়েন। কথা হয় তাদেরই একজন আমেনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার পাকা দালান ছিল। সেটা ভেঙে দিয়েছে। তারপর ছেলে মেয়ে নিয়ে চলে যাই চট্টগ্রামে। সেখানে চার মাস থাকার পর খবর পাই, নবনির্বাচিত স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) আমাদের ঝগড়া মীমাংসার উদ্যাগে নিয়েছেন। এরপর ছেলেমেয়ে নিয়ে আবার গ্রামের বাড়িতে এসেছি।
একই বাড়ির আব্দুল মজিদ বলেন, ঝগড়ায় আমার ও আমার বড় ভাইয়ের সাতটি ঘর আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে। হামলা আর পুলিশের ভয়ে পরিবার নিয়ে এলাকা ছাড়ি।
একইভাবে প্রতিপক্ষের হামলায় জর্জরিত ছিলেন আজইরা বাড়ির লোকজনও। সরকার বাড়ির মানুষের হামলার ভয়ে তাদেরকেও পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। তাদের বাড়িঘরেও চালানো হয়েছে ভাঙচুর-লুটতরাজ।
এ চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের গৌরনগর গ্রামের। যেখানে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে চলছে এমন অরাজকতা-অশান্তি।
১৯৮৬ সালে প্রথম সংঘর্ষে আজইরা বাড়ির আলী হোসেন নামে এক যুবক নিহত হন। এরপর ২০১১ সালের সংঘর্ষে সরকার রবি আউয়াল নামে সরকার বাড়ির একজন নিহত হন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর সরকার বাড়ির লোকজন স্থানীয় বাজারে আজইরা বাড়ির দুলাল মিয়া ও জয়নাল মিয়াকে কুপিয়ে জখম করেন। এ সময় ঘটনাস্থলে দুলাই মিয়া মারা যায়। একদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয়নাল মিয়ার মৃত্যু হয়। এসব সংঘর্ষে আহত হন হাজার হাজার মানুষ। লুট হয়েছে শত শত বাড়িঘর। এ ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে এগিয়ে আসেন নবীনগর-৫ আসনের সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুল।
শুক্রবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় গৌরনগর ঈদগাঁ মাঠে দুইপক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে শান্তি সমাবেশ করে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন তিনি।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি তাদেরও দায়িত্ব সমাজকে কলুষমুক্ত রাখা এবং শৃঙ্খলা রক্ষা করা। যারা আমার নির্বাচনে জান-মাল দিয়ে খেটেছেন তাদের মধ্যেও কেউ যদি সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করেন তাহলে আমি তাদের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়াবো। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহান চৌধুরী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সরকার, নবীনগর সার্কেলের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার চিত্ত রঞ্জন পাল, নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রনজিৎ রায়সহ অনেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৯
এসআই