গ্রেফতারকৃত নাইম ঢাকার ধামরাই থানার আইনগঞ্জের হাসান আলীর ছেলে। তিনি ধামরাই কলেজের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র।
আর হামলার শিকার জেরিন আক্তার মিলি (২৬) রাজশাহী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। জেরিন বর্তমানে ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পিবিআই রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, বোরকা পরে আক্রমণ করায় এ ঘটনার কোনো 'ক্লু' পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তারা তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় নাইমকে সনাক্ত করেন। শুক্রবার ভোরে কৌশলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে সব স্বীকার করেন তিনি।
এএসপি আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীর পুঠিয়ার বানেশ্বরে শিশু সন্তানের সামনেই গৃহবধূ জেরিনের মুখে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে থানায় মামলা করেন তার ভাই জিসান হোসেন। তবে অপরাধী বোরকা পরা থাকায় ওই ঘটনায় জড়িত কাউকে চিহ্নিত করতে হিমশিম খাচ্ছিল পুঠিয়া থানা পুলিশ। পরে পিবিআইয়’র ঢাকার বিশেষ টিমের সহযোগিতা নেওয়া হয়।
এর একপর্যায়ে নাইমকে চিহ্নিত করে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে নাইম জানিয়েছে, জেরিনের স্বামী মিজানুর রহমান একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করতেন। কয়েক বছর আগে তিনি ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। তখন স্বামী মিজানুরের সঙ্গে জেরিনও ঢাকায় থাকতেন। ওই সময় ইডেন কলেজে ডিগ্রিতে পড়াশোনা করতেন জেরিন।
তখন ফেসবুকে ধামরাই কলেজের এইচএসসির শিক্ষার্থী নাইমের সঙ্গে জেরিনের পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে আলাপ চলতে থাকে। একপর্যায়ে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন জেরিন।
তার স্বামীর অজান্তে জেরিন নাইমের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতেন। এরই মধ্যে জেরিন একটি সন্তানের জন্ম দেন। প্রায় তিন বছর আগে মিজানুর তার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে পুঠিয়ার বানেশ্বরে চলে আসেন। তারপরও নাইমের সঙ্গে জেরিনের যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। গেল নভেম্বরে নাইম ঢাকা থেকে বানেশ্বর গিয়ে জেরিনের সঙ্গে দেখা করেন। তবে এসবের কিছুই জানতেন না জেরিনের স্বামী।
নাইমের প্রথম প্রেম জেরিন। তাই বয়সে বড় হলেও স্বামী-সন্তান রেখে তার সাথে পালিয়ে বিয়ে করার জন্য জেরিনকে প্রস্তাব দিয়েছিল নাইম। কিন্তু জেরিন সায় না দিয়ে ফেসবুকে তাকে ব্লক করে দেন। নাইমের ফোন ধরাও বন্ধ করে দেন।
এ সময় নাইম খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, আরও কয়েকজন ছেলের সঙ্গেও জেরিনের পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে নাইম জেরিনের মুখে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনা আঁটে।
গত ২৮ জানুয়ারি নাইম পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে যায়। সেখানে গিয়ে দুই বোতল অকটেন কেনেন। যাওয়ার সময় এক বান্ধবীর কাছ থেকে বোরকা নিয়ে যান। তা পড়েই ২৯ জানুয়ারি ভোরে জেরিনের বাড়ির সামনে যান। জেরিন তার সন্তানকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার সময় নাইম একটি মশালে অকটেন ঢেলে আগুন জ্বালান এবং সেটি জেরিনের মুখের ওপর ছুড়ে পালিয়ে যান। ওই আগুনেই ঝলসে যায় জেরিনের মুখ।
জানতে চাইলে এএসপি আবুল কালাম আজাদ বলেন, শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে নাইমকে পুঠিয়া থানায় হস্তান্তর করা হবে। ওই মামলায় থানা পুলিশ তাকে আদালতের হাজির করবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৯
এসএস/এমএমএস