ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

১৬ নয়, ৪ স্তরের অনুমোদনেই হবে ভবন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৯
১৬ নয়, ৪ স্তরের অনুমোদনেই হবে ভবন বৈঠকে গণপূর্ত ও গৃহায়ন মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষভুক্ত (কেডিএ) এলাকার মতো স্থানগুলোতে ভবনের নকশা অনুমোদনে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ভবন বানাতে ১৬ স্তরের অনুমোদনের প্রক্রিয়া কমিয়ে চার স্তরে আনা হচ্ছে।

বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সমন্বয়ে রাজউক ও সিডিএ সেবা সহজীকরণের ওপর মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

তিনি বলেন, ‘আমরা আজকে কতোগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এই সিদ্ধান্তগুলো মানুষের সেবার জন্য, সেবা সহজীকরণের জন্য। আমি যদি আরও খোলামেলাভাবে বলি দীর্ঘদিনের অনাকাঙ্ক্ষিত ভোগান্তি থেকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা যুগান্তকারী কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ’

‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মতো আমাদের অন্যান্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যেগুলো রয়েছে সেগুলো থেকে ভবন নির্মাণের জন্য নকশা অনুমোদন নিতে হয়। এই অনুমোদন প্রক্রিয়ায় ১৬টি স্তর অতিক্রম করতে হতো। এই ১৬টি স্তর অতিক্রম করতে গিয়ে সীমাহীন ভোগান্তির অভিযোগ জনগণের ছিল। আমরা এটি গভীরভাবে পর্যালোচনা করেছি। বিডা আমাদের এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে। ’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেখেছি গতানুগতিক যে ১৬টি স্তর, এর কোনো আবশ্যকতা নেই। কেবল সেবাপ্রার্থীদের ভোগান্তি বাড়ানো ও নামকাওয়াস্তে একটি পদ্ধতির ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়। আমরা আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছি ১৬টি স্তরের পরিবর্তে চারটি স্তর প্রয়োজন হবে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে। আজকে আমরা ১২টি স্তরকে বাদ দিয়ে দিচ্ছি। এই ১২টি স্তরের কোনো প্রয়োজন নেই। ’ 

‘যখন কোনো সেবাপ্রার্থীকে এই ১২টি প্রক্রিয়ায় যেতে হতো, তখন অকারণে অনাহুতভাবে তার সীমাহীন ভোগান্তি হতো। সেই ভোগান্তি দূর করে সহজ করার মধ্য দিয়ে জনসেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া আমাদের লক্ষ্য। ’

শ ম রেজাউল করিম জানান, এখন ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদনের জন্য সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ বিতরণকারী কর্তৃপক্ষ, গ্যাস সরবরাহকারী কর্তৃপক্ষ, ওয়াসা, পুলিশ, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ ১২টি সংস্থার অনুমোদন আর প্রয়োজন হবে না।

এবার থেকে ভবনের নকশা অনুমোদনের জন্য চারটি স্তর তুলে ধরে গৃহায়ন মন্ত্রী বলেন, ‘ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ছাড়পত্র নিতে হবে। ভবনের উচ্চতার বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের অনাপত্তি নিতে হবে, তবে এটাকেও আমরা সহজ করে দিয়েছি। যে এলাকা প্লেন চলাচলের পথ নয়, সেই এলাকা নির্ণয় করে এতো সহজ করে দেবো যে, কর্তৃপক্ষ ম্যাপটাকে ফলো করে প্ল্যান দিতে পারবেন। এই অঞ্চল প্রেন চলাচলের জায়গা নয়, এ বিষয়ে একটা গেজেট নোটিফিকেশন লাগবে। এটি আমরা দু’একদিনের মধ্যে সম্পন্ন করবো। যেখানে প্লেন চলাচল নেই, সেখানে অনাপত্তিপত্র আনতে যেতে হবে না। ’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গভবন, প্র্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিশেষ বিশেষ এলাকা বা স্পর্শকাতর এলাকার পাশে কোনো ইমারত নির্মাণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর অনাপত্তি লাগবে। আর দশতলা ভবনের ঊর্ধ্বে হলে ফায়ার সার্ভিসের অনাপত্তি লাগবে। এছাড়া কোনো প্রয়োজন নেই। ’

যারা নিয়মনীতি না মেনে ভবন নির্মাণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান মন্ত্রী।

রেজাউল করিম বলেন, ‘একটা প্ল্যান পাসের জন্য সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আগে সর্বোচ্চ সময় লাগতো ১৫০ দিন। এই ১৫০ দিন থেকে আমরা কমিয়ে ৫৩ দিনে নিয়ে আসছি। তাহলে কতো বড় পরিবর্তন নিয়ে আসছি। এক্ষেত্রে ব্যয় কমে যাচ্ছে। ’

তিনি বলেন, ‘প্রোপারলি হলে আপনি সাত দিনের মধ্যে রেজাল্ট পেয়ে যেতে পারেন। আমরা সর্বোচ্চ সীমাটা করেছি ৫৩ দিন। ’

নকশা অনুমোদন প্রক্রিয়ায় অটোমেশন পদ্ধতি কার্যকর করা হচ্ছে জানিয়ে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘সেক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন, সেগুলো দিয়েই প্রত্যেকে আবেদন করবেন। এই চারটি রিকয়্যারমেন্ট যদি তিনি ফুলফিল না করেন, তবে তার আবেদনটাই অনলাইনে অ্যাকসেপ্ট হবে না। ’

রেজাউল করিম বলেন, ‘প্রতিদিন হাজার হাজার লোক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে গিয়ে রাজউকে গিয়ে ভর করেন। প্রতিটি রুমে ঢুকে যান, কর্মকর্তারা কাজও করতে পারেন না। কারণ এতোগুলো লোক এলে তার কথা শুনতে হয়। সমস্যা শুনতে হয়। তাকে সমাধান দিতে হয়, ফাইল আসতে হয়। নানা রকম ভোগান্তি। এই অটোমেশন পদ্ধতি চালু করার পর দেখা যাবে কাউকে সরাসরি রাজউকে বা চউকে আসার দরকার নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্বিঘ্নে কাজ করবেন। আমাদের সময় বাঁচবে। ’

‘আমাদের দফতর থেকে ম্যাসেজ চলে যাবে আপনার প্ল্যান অ্যাপ্রুভড বা ডিস-অ্যাপ্রুভড হয়েছে। আপনি কালেক্ট করেন বা ডাউনলোড করে নিতে পারেন। একেবারে সহজীকরণ পদ্ধতির জায়গায় আমরা নিয়ে আসছি। এতে মানুষের ভোগান্তি কমলো, ব্যয় কমলো। ’

মন্ত্রী বলেন, ‘এখন কোনো দালালের কাছে যেতে হবে না। অন্যায় পথে কাউকে কনভিন্স করার চেষ্টা করা লাগবে না। ’

আগামী ১ মে থেকে আর কোনো ম্যানুয়ালি নকশা অনুমোদন বা অন্য কোনো আবেদনের সুযোগ থাকবে না বলেও জানান রেজাউল করিম।

মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে ইমারত নির্মাণের ক্ষেত্রে আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক ঘটনা দেখি। ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যর্থতা, ডেভেলপারদের ব্যর্থতা, অতিলোভী কিছু লোকদের ব্যর্থতা, আমরা যারা নিজেরা দালান করতে চাই তাদের ব্যর্থতা। সবকিছু মিলিয়ে অকালে শ্রমিকদের প্রাণ ঝরে যায়, ভবনে বসবাসকারী সুন্দর পরিবারটি ধ্বংস হয়ে যায়। এজন্য প্রতিকারের ব্যবস্থা বাংলাদেশে আইনে ওরকম নেই। ’

‘আজকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সব ইমারত নির্মাণের ক্ষেত্রে ইন্সুরেন্স বাধ্যতামূলক। ইন্সুরেন্সেরটা হলে যিনি ভবনটা নির্মাণের দায়িত্ব নিচ্ছেন তিনিও যেনতেনভাবে নির্মাণ করতে চাইবেন না। কারণ তিনি ভাববেন, এই ভবনটা ধসে গেলে আমার এতো টাকার ইন্সুরেন্স পে করতে হবে। অথবা কেউ যদি অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার শিকার হন, তার পরিবারও একটা নিশ্চয়তা পাবে। এই ইনস্যুরেন্সের ক্ষতিপূরণ তাকে দিতে হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ইনস্যুরেন্স পদ্ধতি আছে। আমরা সেটি ইম্পোজ করলাম। ’

এ প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করতে পারলে আন্তর্জাতিকভাবে কোনো দেশকে অ্যাসেস করার যে স্কোরিং সেখানে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলেও মনে করেন মন্ত্রী।

গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সব প্রতিষ্ঠান ও বাইরের যতো প্রতিষ্ঠান আছে সবাইকে এই নিয়ম ও বিধিবিধান অনুসরণ করতে হবে। যারা বিধিবিধান অনুসরণ করবেন না, তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। সেই জবাবদিহিতার জন্য আইনগত ব্যবস্থা রয়েছে, প্রশাসনিক ব্যবস্থাও আছে। ’

এ সময় বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকারসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৯/আপডেট ১৫১৭ ঘণ্টা
আরএম/টিএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।