ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভালোবাসা-বাসন্তী রঙে রঙিন সমুদ্র সৈকত

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৯
ভালোবাসা-বাসন্তী রঙে রঙিন সমুদ্র সৈকত সমুদ্র সৈকতে পর্যটকরা, ছবি: বাংলানিউজ

কক্সবাজার: পহেলা ফাগুন বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ছিলো। বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। সরকারি ছুটি না থাকলেও বিশেষ এ দুইটি দিনকে ঘিরে কক্সবাজারে অন্তত লাখো পর্যটকের সমাগম হয়েছে।

কেউ প্রিয়জনের সঙ্গে, কেউ বাবা-মা আর কেউবা প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে ছুটে এসেছেন বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে।   সৈকতের বালিয়াড়িতে বসে সময় কাটানো, সমুদ্র স্নান, বিকেলে প্রিয়জনের পাশে দাঁড়িয়ে সুর্যাস্ত অবলোকনসহ প্রিয়সব মুহুরর্ত যেন রঙিন হয়ে উঠেছে ভালোবাসা আর বাসন্তীর রঙে।

আর সমুদ্রের উত্থাল ঢেউয়ের সঙ্গেও যেন চলছে ভালবাসার মিতালী।

পর্যটকদের পাশাপাশি সমুদ্র সৈকতে স্থানীয়রাও মেতেছেন ফাগুন আর ভালোবাসার আনন্দে। যেন ভালোবাসা আর ফাগুনের রঙে রাঙিয়ে উঠলো অনাবিল সুন্দরের হাতছানি বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।

যেকোনো বিশেষ দিন মানেই প্রিয়জনদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো। একসঙ্গে ভালবাসার আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া। সুযোগ বুঝে হাত ধরে সামনে এগিয়ে যাওয়া। আর সেটি যদি হয় এই সমুদ্র সৈকত! তাহলে তো আর কথাই নেই’। সমুদ্র সৈকতের বালুকাবেলায় বসে এভাবেই অনুভূতি ব্যক্ত করলেন কক্সবাজার বেতারের অনুষ্ঠান ঘোষক তানজিন সিদ্দিকা।

তারই সহকর্মী শামীম আকতার বললেন, একটু ভিন্নভাবে। ‘সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূরেই আমার বাড়ি। কিন্তু কর্ম ব্যস্ততার কারণে সৈকতে খুব একটা আসা হয় না। তাই এ ধরনের বিশেষ দিনগুলোতে অন্তত সৈকতের নরম বালু আর লোনাজলে পা ভেজানোর জন্য চলে আসি। চারিদিকে যেন ভালোবাসার রঙ লেগে আছে। আসলেই ভাল লাগছে।

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থেকে আসা স্নিগ্ধা রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এমনিতেই আজ ভালোবাসা দিবস। কিন্তু আমাদের জন্য এই দিনটি আরো স্পেশাল। কারণ তিনবছর আগে এইদিনেই আমাদের বিয়ে হয়েছিল। তাই বিশেষ দিনে প্রিয়জনের সঙ্গে বিশেষ একটি জায়গায় ঘুরে বেড়ানো, সময় কাটানো আসলেই আমার কাছে অন্য রকম অনুভূতি। সত্যিই ভাল লাগছে।

‘ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে সময় কাটানো, আড্ডা দেওয়া, ঘুরে বেড়ানো আসলেই বিষয়টি খুবই আনন্দের। আর জায়গাটি যদি হয় এই সমুদ্র সৈকতের মতো সুন্দর,তাহলে বুঝতেই পারছেন অনুভূতিটা কেমন হবে’ এভাবেই বলছিলেন ঢাকার গাজীপুর থেকে পর্যটক আলতাফ মাহমুদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সোহাইনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমার কাছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত মানেই স্পেশাল একটি জায়গা। যদিও এখন বর্ষা নয়, যখন বৃষ্টি নামে, বৃষ্টির সঙ্গে সমুদ্রকে দেখা আমার কাছে অসাধারণ অনুভূতি। কক্সবাজার আসার সময় পয়লা ফাগুন বা ভালোবাসা দিবসের কথা মোটেও ভাবিনি। কিন্তু এখানে এসেই দেখছি, এদিনটি উদযাপনের জন্য অনেকেই আসছে,দেখে খুব ভালো লাগছে’।

এদিকে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে কক্সবাজারের প্রায় চারশো হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসে পড়েছে বাড়তি চাপ। সব হোটেলেই ৮০ভাগেরও বেশি রুম আগে থেকেই বুকিং হয়ে গেছে। আবার কোনো কোনো হোটেলে বিশেষ এই দিন উপলক্ষে ৫০ শতাংশ ছাড়সহ পর্যটকদের জন্য রাখা হয়েছে নানা আয়োজন।

কক্সবাজার লাবনী সৈকতের হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশনালের জেনারেল ম্যানেজার জানান, এইদিনে পর্যটকদের জন্য ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বাড়তি সেবা নিশ্চিত করার বিষয়টিও আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।

পাঁচ তারকা মানের হোটেল সি-গাল’র সিইও শেখ ইমরুল ইসলাম সিদ্দিকী বাংলানিউজকে জানান, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এবারে বেশ ভালোই সাড়া পড়েছে। পর্যটকদের বাড়তি সেবা দিতে আমাদেরও বিভিন্ন প্রস্তুতি ছিল। তবে এবারে বিশেষ কোনো কনসার্ট বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আযোজন আমাদের হোটেলে  নেই। তবুও আমরা আশা করছি ভ্রমণের আনন্দদায়ক এবং ভালো স্মৃতি নিয়েই পর্য়টকেরা ফিরতে পারবেন।

কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. ফকরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে সার্বক্ষণিক টুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। এছাড়া বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এখানে লাখো পর্যটকের সমাগম হয়েছে। এ অবস্থায় পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে টুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে লাবনী, সুগন্ধা বিচসহ আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এ বিশেষ দিনটিকে ঘিরে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহরের কয়েকটি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানোসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও সৈকতসহ আশপাশের এলাকায় পর্যটকদের আগমন ও স্থানীয়দের পদচারণা নিরাপদ করতে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও  সাদা পোশাকধারী পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৯
এসবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।