ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অবকাঠামো নির্মাণে ঠিকাদারদের দৌরাত্ম্য শেষ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৯
অবকাঠামো নির্মাণে ঠিকাদারদের দৌরাত্ম্য শেষ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম

ঢাকা: সরকারি অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের দৌরাত্ম্য একেবারে শেষ বলে মন্তব্য করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। 

তিনি বলেন, আমরা স্বচ্ছতার মধ্যে দিয়ে আমাদের দায়িত্বের গতিকে ত্বরান্বিত করতে চাই। যদি এটা মেনে থাকতে চান তাহলে থাকতে পারেন।

আর যদি থাকতে না চান তাহলে চলে যান, না হলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো। জনগণের কষ্টের টাকা দিয়ে আমাদের বেতন দিয়ে দায়িত্বে রাখা হয়। এ পরিস্থিতিতে বসে আবার ঠিকাদারদের মাধ্যমে জনগণের টাকা নষ্ট করার আর কোনো সুযোগ নেই।

বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ৬ষ্ঠ আন্তর্জাতিক ‘ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো-২০১৯’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ৩ দিনব্যাপী প্রদর্শনীটি আয়োজন করেছে ইলেকট্রনিকস সেফটি এবং সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন (ইসাব)।

শ ম রেজাউল করিম বলেন, আমি জানি অনেক বড়দের সঙ্গে আমার এ যুদ্ধ। যারা অর্থ-বৃত্তে ও ক্ষমতায় অনেক বেশি শক্তিশালী। যাদের পেছনে বড় রাজনৈতিক ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু আমার আত্মবিশ্বাস অনেক দৃঢ়। আমি আল্লাহ আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কাউকে এ ক্ষেত্রে গ্রাহ্য করি না।

এ সময় তিনি কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, দেশের সমস্ত অবকাঠামোগত উন্নয়নগুলো পরিচালনা করে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। পরিদর্শনের জন্য আমি উত্তরার তৃতীয় ফেইজে গিয়েছি। কাঠামোগুলো কেন হয়নি সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারদেরকে ডেকে জানতে চেয়েছি। দু’বছরের কাজের চুক্তি নিয়ে ৬ বছরেও একটি কাজ শেষ হয়নি। কিন্তু প্রতিবছর নির্মাণের খরচ বাড়তি দেখানো হয়েছে। যেটার নাম রেখেছিল 'ফ্রন্ট লোডিং'। এ ধরনের লোডিং আর হবে না। ঠিকাদার কাজ করতে পারবে না, আর সরকার বিল বাড়াবে, তা হবে না। এ টাকা জনগণের টাকা, তা নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।  

তিনি আরও বলেন, ঢাকার আরেকটি অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে ঠিকাদারসহ ইঞ্জিনিয়ার সবাইকে ওভার বিলও দেওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু অবকাঠামো নির্মাণের কোনো অগ্রগতি নেই। এ অবস্থায় আমি ১৫ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে বলেছি, যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় আসতে হবে। এরকম হতে পারে না। আমাকে ভয়, তদবির কিংবা কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা দিয়ে রাজি করানোর চেষ্টা করেও লাভ হবে না।  

প্লান পাস করতে আর সরকারি অফিসে আসতে হবে না, অনলাইনেই তা সম্ভব হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি মন্ত্রণালয়ের যোগদান করার পরই দেখেছি একটি সনাতন পদ্ধতি থেকে উত্তরণের কোনো পথ খোলা নেই। তাই সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছি, এ সব বিষয় আমাকে আগে বোঝাতে হবে। আমি জানতে চেয়েছি একটি প্লান পাস করতে কেন ১৫০ দিন কিংবা তার চেয়ে বেশি সময় লাগবে। কারো কারো কাছ থেকে অভিযোগ পেলাম প্লান পাস করতে ছয় মাস থেকে তিন বছর পর্যন্ত সময় লাগে। যাচাই-বাছাই করে দেখলাম সর্বমোট ১৬টি ধাপ অতিক্রম করা লাগে। ১৬টা টেবিলে ১৬ জন কর্মকর্তাকে রাজি খুশি করানো লাগতো। এখন তা কমিয়ে চারটি ধাপে নিয়ে এসেছি এবং বিশেষ প্রয়োজনে ২টি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। সর্বোচ্চ ৫০ দিনের মধ্যে একটি প্লান পাস এখন থেকে করানো যাবে।

‘তাছাড়া এ বছরের মে মাস থেকে আর কাউকে সরকারি কার্যালয়ে এসে প্লান পাসের জন্য সময় নষ্ট করতে হবে না। অনলাইনে ঘরে বসেই তা করা যাবে’- যোগ করেন মন্ত্রী।  

তিনি আরো বলেন, অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে সর্বত্র আমরা অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা নিশ্চিতের চেষ্টায় আছি। এগুলো জোরদার করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থায় আছি। এ প্রদর্শনী সে ক্ষেত্রে বা সচেতনতা অর্জনে আরো সহযোগী ভূমিকা পালন করছে।  

ইসাবের সভাপতি মোতাহের হোসেন খানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহমেদ খান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি সাইফুল আলম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ'র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।  

এবারের এক্সপোতে ২৫ দেশ থেকে ৭০টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। এছাড়া সরকারের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং র‍্যাবেরও স্টল রয়েছে প্রদর্শনীতে। ৩ দিনব্যাপী এক্সপোটিতে অগ্নি নির্বাপন বিষয়ক চারটি সেমিনারও থাকবে। এ এক্সপো ও সেমিনারগুলো সব ধরনের দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। আয়োজকদের মতে, এর মাধ্যমে দেশে অগ্নি নির্বাপন বিষয়ক পণ্য ও যন্ত্রপাতি উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কেননা আগত বিদেশি ব্যবসায়ীরা এদেশে সব ধরনের ব্যবসা করতে আগ্রহী বলেই এক্সপোতে অংশগ্রহণ করেছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮
এমএএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।