শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, সরকারি বন্ধের দিন হওয়া সত্ত্বেও হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের নতুন ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত ৮টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুনে নতুন ভবনের নিচতলাসহ দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা মিলে প্রায় ১৫টির মতো কক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে অস্থায়ী একটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে ফিরে আসা রোগীদের তথ্য সংরক্ষণসহ তাদের নির্ধারিত ওয়ার্ডে ফেরত পাঠাতে দেখা গেছে।
সেবা বুথে দায়িত্বরত একজন নার্স বাংলানিউজকে জানান, বৃহস্পতিবার অগ্নিকাণ্ডের সময় ১ হাজার ১৭৮ জন রোগী ভর্তি ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে সবাইকে বের করে সামনের মাঠে রাখা হয়। এরপর রোগীর অবস্থান বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে সবাইকে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। মোটামুটি সুস্থ থাকা রোগীদের অনেকেই বাসায় ফিরে গিয়েছিলেন। শুক্রবার সকাল থেকে রোগীরা আবার হাসপাতালে ফেরত আসতে শুরু করেছেন।
দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ভর্তিকৃত ৭১৮ জন রোগী ফিরে এসেছেন। সে হিসেবে অর্ধেকের বেশি বা প্রায় ৬০ শতাংশ রোগী ফেরত এসেছেন। এছাড়া নতুন রোগীরাও সেবা নিতে আসছেন। ফেরত আসা রোগীদের সহায়তা করতেই এ অস্থায়ী বুথ স্থাপন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
হাসপাতালের দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা জানান, ১৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০টি ওয়ার্ডে সেবা চালু করা হয়েছে। ৩, ৪, ৮ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ড বন্ধ রয়েছে। তবে সন্ধ্যার মধ্যে ৪ নম্বর ওয়ার্ডেও সেবা চালু সম্ভব হবে। বন্ধ থাকা ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে শিশু ওয়ার্ডটি বন্ধ থাকবে। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে চালুর প্রক্রিয়া চলছে।
হাসপাতালের কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল মান্নান বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার রোগীদের স্থানান্তরের সময় অ্যাম্বুলেন্স খরচ ফ্রি থাকলেও শুক্রবার ফিরে আসার ক্ষেত্রে খরচ রোগীদেরই বহন করতে হচ্ছে। অনেক রোগীরা এখানে অপারেশনের পর অবজারভেশনে ছিলেন, আবার অনেকের অপারেশনের তারিখ সামনে। সাধারণত দুই ধরনের রোগীরাই সকাল থেকে ফেরত আসছেন।
নিচতলায় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের (মেডিসিন-মহিলা) সামনে গিয়ে দেখা যায়, ১০/১২ জন রোগী ওয়ার্ডের সামনে ভর্তির জন্য অপেক্ষা করছেন। আর ভেতরে ধোয়া-মোছার কাজ করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আগুনে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ওয়ার্ডটি চালুর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা কবির ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত মা ফজিলা বিবিকে নিয়ে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি জানান, গত ১০ দিন ধরেই ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসারত রয়েছেন তার মা। বৃহস্পতিবার আগুন লাগার পর কোনোরকম তাড়াহুড়ো করে মাকে নিয়ে বের হয়ে যান তিনি। রাতে বাসায় থাকলেও শুক্রবার সকালে হাসপাতাল খোলার খবর পেয়ে আবার হাসপাতালে এসেছেন। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও ওয়ার্ডের নির্দিষ্ট সিটে উঠতে পারেননি তিনি। ৪ নম্বর ওয়ার্ড চালুর পর তার মাকে সিট দেওয়া হবে সেই অপেক্ষাতে রয়েছেন তিনি।
এদিকে, হাসপাতালের বহির্বিভাগ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই গুমোট পোড়া গন্ধ মনে করিয়ে দেবে বৃহস্পতিবারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সের মুখে আলোচনার বিষয়ও এ ঘটনা। তাদের মতে, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের 'অন্যতম ট্রাজেডি' এ আগুন। পোড়া গন্ধ ফুরিয়ে যাবে, হয়তো পোড়া দাগও মুছে যাবে। আবার পুরোদমে হাসপাতালটি স্বাভাবিক হবে, তবে এ থেকে শিক্ষা না নিলে ভবিষ্যতে আরো বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা থেকেই যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৯
পিএম/আরবি/