এছাড়া আবুরী-মাগুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের টিনের চালা ভেঙে গেছে। সেইসঙ্গে ফুটো হয়ে গেছে ২০-২৫টি বাড়ির টিনের চালা।
রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভোর রাতে এ শিলাবৃষ্টি হয়। এতে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার রাজনগর, নওদাপাড়া, কাকিলাদহ, আবুরী, বড়বাড়ীয়া, হিদিরামপুর, আজমপুর, মল্লিকপাড়া, নওদাআজমপুর, মিটন, বুরাপাড়া, মেহেরনগর, চক, বাঁশবাড়িয়া, শ্রীরামপুর, কুর্শাসহ প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামে শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে ওই এলাকার প্রায় ৯৫ ভাগ তামাক ক্ষেত সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।
কৃষকরা দাবি করেছেন এক রাতের শিলাবৃষ্টিতে মিরপুর উপজেলায় প্রায় ১শ’ কোটি টাকার তামাক নষ্ট হয়ে গেছে।
কাকিলদহ এলাকার মল্লিক পাড়ার কৃষক আবু বক্কর বলেন, এবছর আমি বর্গা নিয়ে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে তামাকের চাষ করেছি। ক্ষেতে তামাকের কাজ প্রায় শেষের দিকে এখন বাড়িতে এনে শুকিয়ে বিক্রি করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এরই মধ্যে রাতে প্রচুর শিলাবৃষ্টিতে আমার সব তামাক নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আমার সব মিলিয়ে খরচ হয়েছিলো ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। এবছর আশা করেছিলাম প্রায় ২ লাখ টাকার তামাক বিক্রি করতে পারবো। তবে শিলা বৃষ্টির পরে যে অবস্থা দেখছি তাতে আয় তো দূরের কথা ২ হাজার টাকা লাগবে জমি পরিষ্কার করতে।
অপর এক কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি এবছর ৮ বিঘা জমিতে তামাকের চাষ করেছি। তামাকের যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তা বলার অবকাশ নেই। আমার মতো এই এলাকার প্রায় ২শ’ তামাক চাষি একেবারে সর্বশান্ত হয়ে গেছে।
মিটন এলাকার তামাক চাষি মারফত আলী বলেন, শনিবার রাতেও আশা ছিল তামাক বিক্রি করে লাভের মুখ দেখবো। তামাকের মাঠের কাজ শেষ। এখন শুধু শুকিয়ে বিক্রি করবো। তবে এক রাতের শিলাবৃষ্টি সব শেষ করে দিয়ে গেলো।
মালিহাদ ইউনিয়নের আশাননগর এলাকার কেসমত জানান, রাজপুর, রাজনগর, আবুরী, আশাননগর মাঠে প্রায় ২৫-৩০ জন চাষির কলা বাগান একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। বিঘাপতি সেখানে প্রায় এক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসের দেয়া তথ্য মতে, এবছর মিরপুর উপজেলায় ৭ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে তামাক, ৬৫০ হেক্টর জমিতে গম, ৯১০ হেক্টর জমিতে মসুর, ১ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান, ২১০ হেক্টর জমিতে পান, ৭৫০ হেক্টর জমিতে সবজি, ৩৭৫ হেক্টর জমিতে কলা, ১৮৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ ও ১১০ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ করা হয়েছে।
এর মধ্যে রোববার ভোর রাতে শিলাবৃষ্টিতে মিরপুর উপজেলার প্রায় ১ হাজার ৫০৮ হেক্টর জমির তামাক, ৩ হেক্টর জমির গম, ১ হেক্টর জমির মসুর, ৩ হেক্টর জমির ভুট্টার সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়া প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমির তামাক, ৭০ হেক্টর জমির গম, ২৪ হেক্টর জমির মসুর, ৮০ হেক্টর জমির ভুট্টা, ৫ হেক্টর জমির পান, ৭ হেক্টর জমির সবজি, ৬০ হেক্টর জমির কলা, ৪০ হেক্টর জমির পেঁয়াজ ও ৩৫ হেক্টর জমির রসুনের আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
আবুরী মাগুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান জানান, শিলাবৃষ্টিতে শ্রেণি কক্ষের চালা ফুটো হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে ৪শ’ শিক্ষার্থী রয়েছে। দিনের বেলায় চালা দিয়ে আলো ঢুকছে। বৃষ্টি এলে ক্লাস করানো সম্ভব হবে না শ্রেণি কক্ষে।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, অর্থকরী ফসল হওয়ায় মিরপুর উপজেলার কৃষকরা তামাক চাষে বেশি আগ্রহ দেখায়। তবে আমরা কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে তামাকের বিকল্প ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। কৃষকরা যদি তামাকের বিকল্প মসুর, ভুট্টা, গম, পেঁয়াজ, রসুন ও ধান চাষ করে তাহলে এ ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়ে লাভবান হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
আরএ