সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) আবু ধাবিতে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ক্রাউন প্রিন্স বাংলাদেশ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে শ্রম বাজারে জনশক্তি আমদানি এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন।
পরে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
আবু ধাবির শ্রম বাজারে জনশক্তি আমদানি এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত আগ্রহী জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক জানান, এ বিষয়ে মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুই দেশের পররাষ্ট্র বিভাগ আলোচনায় বসবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানিতে আগ্রহী জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় এ ধরনের ‘ফরেইন অফিস কনসালটেশন’ সাধারণত হয় না। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আগ্রহের কারণে আগামীকালকে (মঙ্গলবার) দুই দেশের মধ্যে এই টেকনিক্যাল আলোচনা হবে।
বৈঠকের এক পর্যায়ে বিভিন্ন এলাকার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাপ্তাহিক বৈঠক ‘মজলিস’ এ অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান ক্রাউন প্রিন্স।
শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মজলিস বৈঠক’ চলাকালে তার পাশে বসার অনুরোধ করেন বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
এ ধরনের ‘মজলিস বৈঠকে’ আলোচনার সময় সাধারণত অতিথিরা থাকেন না জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এটা আমাদের জন্য বিশেষ এবং বিরল সম্মানের। প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ সম্মান দেখিয়ে মজলিস নিয়ে যাওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর সামনে তাদের মজলিস বৈঠকের আলোচনা হয়। যেটা সাধারণত ঘটতে দেখা যায় না।
এরপর আধ ঘণ্টার মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ক্রাউন প্রিন্স একান্তে কথা বলেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সংযুক্ত আরব আমিরাত কিভাবে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পারে, দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা, বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানান শহীদুল হক।
বৈঠকে রোহিঙ্গা সহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয় বলেও জানান তিনি।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মিয়ানমারে নিজ দেশে রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সংযুক্ত আরব আমিরাত সব সময় সক্রিয় জানিয়ে শহীদুল হক বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত সব সময় এ বিষয়ে অ্যাকটিভ। জেনেভাতে ও নিউইর্য়কেও। কি করতে পারে এটা তারা জানাবে। রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতার বিষয়ে নতুন করে কর্মসূচি নেবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ক্রাউন প্রিন্স বাংলাদেশ সফরে আসবেন জানিয়ে বলেন, আমি বেড়াতে যাবো।
পররাষ্ট্র সচিব জানান, বৈঠকের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের সময় ক্রাউন প্রিন্সের বাবার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর একটা ছবি উপহার হিসেবে দেন।
ফাতিমা বিনতে মুবারকের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সৌজন্য সাক্ষাৎ
এর আগে আল বাহার প্যালেসে ইউএই’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং আবুধাবির শাসক মরহুম শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের স্ত্রী, ক্রাউন প্রিন্সের মা শেখ ফাতিমা বিনতে মুবারক আল কেতবির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান, ক্রাউন প্রিন্সের মা ফাতিমা বিনতে মুবারক এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ সময় ধরে খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ, আন্তরিক ও উষ্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশে মেয়েদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান, ব্যবসা, এনজিও কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং সমাজ তাদের কিভাবে দেখছে এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানতে চান ফাতিমা বিনতে মুবারক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের সফলতার চিত্র তুলে ধরেন।
ফাতিমা বিনতে মুবারক বলেন, বাংলাদেশের মহিলাদের দুবাইয়ের নারীদের অনেক কিছু শেখার আছে। কিভাবে ইসলামের মধ্যে থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করা যায়।
এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্কুল কলেজগুলোতে বড় অংশ নারী পড়াশোনা করছে উল্লেখ করে তারা যখন চাকরি বাজারে আসবে তখন তাদের কিভাবে কর্মসংস্থান করা যায়, এসব মেয়েরা যখন চাকরির বাজারে আসবে তখন যাতে সামাজিক সমস্যা না হয়, ধর্মীয় সমস্যা না হয় এটা বাংলাদেশ কিভাবে সমাধান করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তা জানতে চান ক্রাউন প্রিন্সের মা ফাতিমা বিনতে মুবারক।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুবাইয়ের শাসকের বৈঠক
এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুন বৈঠক করেন বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন রশিদ আল মাকতুম।
দুবাইয়ের শাসক বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশ বড় এবং নতুন সেক্টরগুলোতে বিনিয়োগ ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে।
দুবাইয়ের শাসকের বই ‘মাই লাইফ’ এর বাংলা একটি অনুবাদ প্রধানমন্ত্রী দুবাইয়ের শাসককে উপহার হিসেবে দেন। দুবাইয়ের শাসক এজন্য ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশ সময়: ০১১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯
এমইউএম/এসএইচ