মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) তেজগাঁওয়ে সওজ কার্যালয়ে এক মতবিনিয়ময় সভায় তাদের উদ্দেশ্য করে তিনি এভাবেই প্রশ্ন করেন।
সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, কোথাও কোথাও তিনমাসে রাস্তা নষ্ট, বেঁচে থাকতে কতো টাকা লাগে? টাকা দিয়ে কী করবেন? মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে চিঠি আসলে, সেটা কী আমাদের জন্য ভালো খবর?
‘যারা সৎ, তারাও তো এতে কষ্ট পান।
তিনি বলেন, এক পশলা বৃষ্টি হলেই রাস্তার ছাল-বাকল থাকে না। এ রাস্তা করার দরকার কী? কোয়ালিটি নিয়ে প্রশ্ন! কোয়ালিটি এনশিওর (নিশ্চিত) করতে হবে। রাস্তার জন্য বড় বড় বরাদ্দ থাকে। অথচ বর্ষায়, একবার বৃষ্টি হলেই রাস্তা ছেঁড়া কাঁথার মতো ফাটল ও গর্তে ভরে যায়। তার মানে রাস্তা নির্মাণে ত্রুটি আছে। নির্মাণ সামগ্রীতেও ত্রুটি আছে। যথাযথ মানসম্পন্ন সামগ্রী দিয়ে রাস্তা তৈরির সরকারের যে নির্দেশনা আছে, তা মানা হচ্ছে না।
‘আমার নিজের এলাকা, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে, রাস্তা নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলো জনগণ। পরে তদন্তে তা সত্য প্রামণিত হয়। আমি সড়ক ও সেতুমন্ত্রী। আমার এলাকায় যদি এটা হয়, তাহলে সারাদেশেই যে এটা হচ্ছে না, আমি তা বিশ্বাস করবো না কেন?,’ বলেন ওবায়দুল কাদের।
প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, রাস্তা তৈরিতে ও নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারে মানের ব্যাপারে, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার ব্যাপারে কঠোর নজর দিতে হবে।
‘মনে রাখতে হবে, এটা দেশের কাজ। ৯টা-৫টা অফিস করে দেশসেবা করা যায় না। যেদিন একটানা ১০ ঘণ্টা বৃষ্টি হবে, সেদিন কী দেশ আপনাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হবে? আপনারা সেদিনের মাইনে নেবেন না? প্রয়োজনে সারারাত কাজ করতে হবে। সারা বিশ্বেই রাতে রাস্তার কাজ হয়। তখন ট্রাফিক কম থাকে। রাতের অতিরিক্ত কাজের পারিশ্রমিক দেওয়া হবে। রাস্তায় গর্ত হলে শুরু থেকেই ট্রিটমেন্ট করতে হবে,’ বলেন কাদের।
তিনি বলেন, আমি সরেজমিনে অনেক দুর্বলতা দেখতে পাই। তবে অনেকেই ভালো কাজ করছেন। আবার অনেকেই দেশের জন্য কাজ করছেন না। কেবল চাকরি-ই করছেন। ভালো কাজ মানুষ মনে রাখে। ভালো কাজ করলে চারদিকে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। কোয়ালিটি কাজ করলে, কোয়ালিটির জন্য সারাজীবন মানুষ মনে রাখে।
সবাইকে সতর্ক করে তিনি বলেন, এখন মানুষ ইন্টেলিজেন্ট। নির্মাণ খারাপ হলে, নির্মাণ সামগ্রী খারাপ হলে মানুষ তার ছবি তুলে ইন্টারনেটে, মোবাইলে মোবাইলে ছড়িয়ে দেয়। এখন কোনো কিছুই গোপন করা যায় না।
কাদের বলেন, এ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির খবর ছড়িয়ে পড়লে খারাপ লাগে, কষ্ট লাগে। আমি তো আপনাদের কাছ থেকে কমিশন খাই না। প্রমোশন দিয়ে টাকা নিই না। বদলির জন্যও টাকা নিই না। এক সময় তো এটা হতো। তারপরও আমি কেন আপনাদের বদনামের ভাগ নেবো? দায় নেবো? সমালোচনা শুনবো! আমরা একটু সচেতন হলেই এ সমালোচনা এড়াতে পারি।
অতীতের বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, একটা সময় ছিলো, প্রথম তিন/চার বছর- আমার কলিগরা খুব তদবির করতেন। তদবিরের জন্য অস্থির ছিলাম। এখন তো সেটাও বন্ধ হয়েছে। এখন কেউ এটা করে না। আমি মন্ত্রী হওয়ায় তো চাঁদাবাজিও বন্ধ হয়েছে। সাহস পায় না। এটাতো ইমপ্রুভমেন্ট।
সওজের নারী কর্মীদের উৎসাহ দিয়ে তিনি বলেন, মেয়েদের দেখেছি প্রচণ্ড রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে কাজ করছেন। তারা কাজের প্রতি কমিটেড। আমি তাদের উৎসাহিত করছি। সিনিয়ররা কাজ না করলে জুনিয়ররা কাজ করবেন কেন?
‘আমি কাজের মানুষ চিনি। ভালোদেরও চিনি। সবাই খারাপ হলে রাস্তা হয় কিভাবে! আমি বুঝি না, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে এক বছরেই কিভাবে নষ্ট হলো! ওভার লোডিং আছে বুঝলাম। কিন্তু এটাই কী মূলকারণ! আমরা জানি ওই সড়কের কয়েকটা স্থানে সয়েল কন্ডিশন অত্যন্ত খারাপ। কিন্তু ইঞ্জিনিয়াররা তা দেখলেন না! তারা কী করলেন?’
তিনি বলেন, ঢাকা-ভাঙ্গা মহাসড়ক ও এক্সপ্রেসওয়েতে নির্মাণ ব্যয় বেশি হচ্ছে। কিন্তু কাজ তো ভালো হচ্ছে। টাকা বেশি লাগলে আমি রাজি আছি। কিন্তু কাজ ভালো হতে হবে। সওজের হারানো সুনাম ফিরিয়ে আনতে হবে।
সভায় অধিদফতরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
** সন্ধ্যার পর কক্সবাজার যেনো ভুতুড়ে শহর
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯
আরএম/ওএইচ/এমএ