ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জীবন দিয়ে হলেও সৈয়দ আশরাফের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখবো

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯
জীবন দিয়ে হলেও সৈয়দ আশরাফের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখবো ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর (ফাইল ছবি)

জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: বড় ভাই প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ব্যক্তিত্ব ও দূরদর্শিতা দিয়ে কিশোরগঞ্জবাসীকে যে সম্মানের জায়গায় নিয়ে গেছেন জীবন দিয়ে সেই সম্মান অক্ষুণ্ন রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর। 

মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।  

সৈয়দা জাকিয়া নূর দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে এবং আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদ্য প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ছোট বোন।

 

একাদশ জাতীয় সংসদে কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচিত হওয়ার পর সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গত ৩ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। এই আসনের পুর্ননির্বাচনে তার ছোট বোন ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর মঙ্গলবারই তিনি প্রথম জাতীয় সংসদে বক্তব্য রাখেন।  

ডা. জাকিয়া নূর তার বক্তব্যে বলেন, এই সংসদের সদস্য ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আমার বাবা শহীদ নজরুল ইসলাম এবং সদ্য প্রয়াত আমার বড় ভাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। আমি এই সংসদের সদস্য এরচেয়ে গর্বের আর কি হতে পারে। এখন আমার বড় আপা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অক্লান্ত পরিশ্রম করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলছেন।

নিজের রাজনীতির হাতেখড়ি কিভাবে হলো সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে জাকিয়া নূর বলেন, রাজনৈতিক পরিবারে আমার জন্ম। আমাদের বৈঠকখানায় দেখতাম বাবার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বাঁধানো ছবি। একদিন আমার আব্বা আর আম্মা বললেন ‘চল নেতার কাছে যাই’। স্থানটা ছিল মধুপুরগড়ের ভেতরে। যখন আব্বা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠক করছিলেন তখন আমি আর আমার ছোট বোন শেখ রাসেলের নেতৃত্বে স্লোগান দিচ্ছিলাম ‘জয় বাংলা’। এটা বড় কিছু না, তেমন কিছুই বুঝতাম না তারপরও স্লোগান দিচ্ছিলাম। সেটাই ছিল রাজনীতির হাতেখড়ি। তারপর ১৯৭১, ১৯৭৫, স্বৈরাচার শাসন।  

৭৫ পরবর্তী দুঃসহ স্মৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, আজও আমার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করে ৭৫ পরবর্তী বিভীষিকার কথা। আমরা বাবাকে হারিয়েছি। ঢাকা শহরে আমাদের থাকার মতো জায়গা ছিল না। আমার বড় দুই ভাই তখন লন্ডনে নির্বাসিত। এখানে-সেখানে মাসখানেক ঘুরে আমার মা আমাদের নিয়ে ময়মনসিংহে চলে গেলেন মাথা গোজার ঠাঁই হলো। কিন্তু কি অদ্ভূত কোনো সরকারি স্কুলে আমাদের ভর্তি করা হলো না। কি দোষ করেছিলাম আমরা? বাবাকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে হতো। উজ্জ্বল নক্ষত্রের মধ্যে বাবাকে খুঁজতাম। পুরো ঘটনা বোঝার বয়স আগেই হয়েছিল তবুও মিথ্যাটাকে বিশ্বাস করতে ভালো লাগত আমার মতো অসংখ্য শহীদের সন্তানদের চারদিকের বৈরীতাকে ভুলে থাকার জন্য।

তিনি আরও বলেন, জীবিকার প্রয়োজনে খানিকটা বৈরী পরিস্থিতির শিকার হয়ে প্রবাস জীবন কাটিয়েছি। আমি আবার ফিরে এসেছি আমার প্রাণের মাতৃভূমিতে এর চেয়ে বড় তৃপ্তি আর কি হতে পারে। খুব বেশিদিন আগের কথা না প্রবাসে বিদেশি বন্ধুরা বাংলাদেশ বলতে ভারতবেষ্টিত মিয়ানমারের পাশে লোকে-লোকারণ্য ছোট্ট একটি দেশ বুঝতো। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ক্ষুধা আর দারিদ্র্য যার নিত্যসঙ্গী। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। এখন মাথা উঁচু করে বলতে পারি আমি বাংলাদেশের মেয়ে, আমি বাংলাদেশের নাগরিক। আজ আমি গর্বিত এই উন্নয়নের মহাসড়কে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে।
 
সংসদ সদস্য হিসেবে নিজের দায়িত্বের কথা তুলে ধরে জাকিয়া নূর বলেন, যে আসনের আমি সংসদ সদস্য এখানে সামান্য কিছু শঙ্কা আমার মধ্যে কাজ করছে। এই আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন আমার বাবা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আমার বড় ভাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তাই এটি একটি স্পর্শকাতর আসন। তবে আমার কাছে অনুভূতির জায়গা, আশার জায়গা এই যে কিশোরগঞ্জবাসী ৬০-এর দশকের শুরু থেকে আমাদের পাশে আছে এটি পরম আস্থার স্থান। বড় ভাই সৈয়দ আশরাফের অসমাপ্ত কাজ দিয়ে আমি আমার কাজ শুরু করতে চাই। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কিশোরগঞ্জকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে চাই। সৈয়দ আশরাফ তার ব্যক্তিত্ব ও দূরদর্শিতা দিয়ে কিশোরগঞ্জবাসীকে সম্মানের জায়গায় নিয়ে গেছেন। আমি আমার জীবন দিয়ে চেষ্টা করবো সেই সম্মান অক্ষুণ্ন রাখতে। আমার উদ্দেশ্য এমন এক কিশোরগঞ্জ গড়া যেখানে সন্ত্রাস থাকবে না, মাদক থাকবে না, টেন্ডারবাজি থাকবে না। শুধু ভৌত উন্নয়নের দিকে দেখবো না। আমার কাজের ধরন হবে আমার মতো। হয়তো কিছু ক্ষেত্রে আমার ভাই থেকে আলাদা। তবে একটা জাগয়া আমাদের লক্ষ্য এক এবং অভিন্ন, সৎ আদর্শ এবং কল্যাণের রাজনীতি করা। এজন্য আমি সবার সহযোগিতা চাই।  

বাংলাদেশ সময়: ০০০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯ 
এসকে/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।