ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘স্কুলে শহীদ মিনার নেই, তাই ফুল দিতে পারি না’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯
‘স্কুলে শহীদ মিনার নেই, তাই ফুল দিতে পারি না’

মাগুরা: বিদ্যালয় আছে। নেই শহীদ মিনার। তাই হয় না একুশে ফেব্রুয়ারির কোনো আয়োজন। যদিও সরকারি আদেশ অনুযায়ী প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকা বাধ্যতামূলক।

১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মাগুরা শিবরামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো শহীদ মিনার তৈরি হয়নি।

এতে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা জানতে পারছে না ভাষার সঠিক তাৎপর্য, জানাতে পারছে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা।  

দুইদিন বাদেই ২১ ফেব্রুয়ারি। ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর দিন। এদিন দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানায়। তবে প্রতিবারের মতো এবারও সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলো শিবরামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী গোধুলী বিশ্বাস বাংলানিউজকে জানায়, স্কুলে শহীদ মিনার নেই, তাই ফুল দিতে পারি না। শহীদ মিনার না থাকার কারণে ২১ ফেব্রুয়ারি ভালোভাবে পালন করতে পারি না। এছাড়া ওইদিন কোনো ছাত্র-ছাত্রী বিদ্যালয়ে আসতে চায় না।

ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র নাজমুল হাসান বাংলানিউজকে জানায়, ২১ ফেব্রুয়ারির দিন আমাদের বড় ভাইয়েরা বাঁশ, ইট, কলা গাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে। আমরা ওখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাই।

শিবরামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নোজলী শামীমা আখতার বাংলানিউজকে বলেন, অন্য সব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে তারা ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করে। আমাদের বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকায় দিনটি পালন করতে পারি না।

এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কর্তৃপক্ষের কাছে একটি শহীদ মিনার আবেদন করেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রকাশ সাহা বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও গড়ে ওঠেনি শহীদ মিনার। বিষয়টি নিয়ে সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদসহ জন-প্রতিনিধিরা একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি।

শুধু শিবরামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় নয় মাগুরা আদর্শ কলেজও নেই শহীদ মিনার। বর্তমানে এ কলেজে প্রায় তিন হাজার ছাত্রী-ছাত্রী পড়াশোনা করে। শহরে প্রাণ কেন্দ্রে কলেজটি অবস্থিত।

এ বিষয়ে ওই কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সুমাইয়া খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, ভাষার জন্য যারা শহীদ হয়ে ছিলেন, যাদের জন্য আমরা বাংলা ভাষা পেয়েছি, যাদের জন্য আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারি সেই শহীদের জন্য আমরা গর্ব করি। দুঃখের বিষয় আমাদের কলেজে শহীদ মিনার নেই। আমাদের কলেজে একটি শহীদ মিনার তৈরির দাবি জানাই।

আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ সূর্য্য কান্ত বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, মাগুরা জেলা আদর্শ কলেজ একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ। ২১ ফেব্রুয়ারি আসলে শহীদ মিনার না থাকার কারণে আমরা দিনটি ঠিকভাবে পালন করতে পারি না। একাধিকবার জনপ্রতিনিধিরা শহীদ মিনার তৈরির আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি।

মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।  ছবি: বাংলানিউজ

মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ দেব্রত ষোঘ বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে শহীদ মিনারের প্রয়োজন। বর্তমান প্রজন্ম ২১ ফেব্রুয়ারি কেনো পালন করে সেসব বিষয়ে জানতে পারবে। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সেখানে শহীদ মিনার নির্মাণের প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

জেলা শিক্ষা অফিসার রঞ্জিত কুমার বাংলানিউজকে বলেন, জেলায় মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রসা ও কলেজ মিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৯১টি। এরমধ্যে প্রায় ৬০ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে। বাকি ৪০ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। আশা করছি অচিরেই সেইসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার তৈরি করা হবে।

জেলা প্রশাসক আলী আকবর বাংলানিউজকে বলেন, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।