বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান বাংলানিউজকে এ কথা জানিয়েছেন। পরে তিনি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফও করেন।
আলী আহমেদ খান বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত ১০টি মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। সবগুলোই যে ভবন থেকে আগুন ছড়িয়েছে, সেই ভবনের নিচতলায় পাওয়া গেছে। আশঙ্কা করছি, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। মরদেহগুলো অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে।
এর আগে রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে চকবাজারের নন্দ কুমার দত্ত রোডের শেষ মাথায় মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহিদ ম্যানসনে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এলাকাবাসী বলছে, ওই ভবনের কেমিক্যাল কারখানা থেকে আগুন ছড়িয়েছে। কারও কারও মতে, বিকট শব্দে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুন ছড়ায়। একটি ভবনের আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের আরও কয়েকটি বহুতল ভবনে।
এ আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রাত ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন বলে জানায় ফায়ারের কন্ট্রোল রুম। একটার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন।
সাড়ে ৩টার দিকে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান বলেন, এখানে আসার রাস্তাটির দু’পাশই সরু। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সহজে ঢুকতে পারেনি। তবে শেষ পর্যন্ত কয়েকঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছি।
তিনি বলেন, ভবনে দাহ্য পদার্থ থাকার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মোট পাঁচটি ভবনে আগুন লেগে যায়। এখনো আমাদের কাজ চলছে। আমরা কাজ শেষে সার্চ করবো। সার্চ করার পর জানতে পারবো কোনো মরদেহ আছে কি-না। তবে এখন পর্যন্ত আমরা ১০টি মরদেহ উদ্ধার করেছি। এগুলো নিচতলার হোটেলের করিডোরে পাওয়া গেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
গ্যাস সিলিন্ডার নাকি ট্রান্সমিটার বিস্ফোরণ, নাকি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত- এমন এক প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিসের ডিজি বলেন, ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকনের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিট গঠন হচ্ছে। তদন্ত করলেই বোঝা যাবে।
এদিকে এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ আহমদ বাংলানিউজকে জানান, ওয়াহিদ ম্যানসন দেখাশোনা করে প্রয়াত ওয়াহিদের ছেলেরা। ভবনটির নিচতলায় প্লাস্টিকের গোডাউন ছিল। ওপরে ছিল পারফিউমের গোডাউন। এসবের কারণেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় মেয়র সাঈদ খোকন সাংবাদিকদের বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে সব কিছু তুলে ধরা হবে। তবে ৪০-৪৫ জনের মতো ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।
অগ্নিকাণ্ডের পর এখন পর্যন্ত যে দগ্ধ ব্যক্তিরা ঢামেকে ভর্তি হয়েছেন তারা হলেন- রেজাউল (২১), জাকির হোসেন (৫০), সেলিম (৪৫) আনোয়ার (৫০) মোস্তাফিজ (৪০), জাহিদুল (২৮), ইভান (৩০), মাহমুদ (৫৭), রামিম (১২), সালাউদ্দিন (৫০), মোজাফ্ফর হোসেন (৩২) সোহাগ (২৬) সোহান (৩৫) ফজর আলী (২৫), হেলাল (২৫) ও সুজন (৪০)। এদের মধ্যে প্রথম দু’জনের অবস্থা গুরুতর।
যারা আহত হয়েছেন তাদের মধ্যে- আল আমিন (৩৫), কাউছার (৩০), জাহাঙ্গীর (২৩), ছালাম (৩০), রবিউল (৪০), সালাউদ্দিন (৩৪), আনিছুর রহমান (৫০), তানজিল (১৪), রমজানের (১২) নাম জানা গেছে। এদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত আছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯/আপডেট ০৪১১ ঘণ্টা
এজেডএস/পিএম/ওএইচ/ডিএসএস/এমএমআই/এইচএ/
** আগুনের ভয়াবহতা কমেছে, স্বজনদের খুঁজছেন অনেকে
** চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ ১৬
** চকবাজারে ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৩৭ ইউনিট- দগ্ধ ১৬