বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দিবসটি উপলক্ষ্য সকাল সাড়ে ৬টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন ভবনের সামনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলনের পর উপাচার্যের নেতৃত্বে প্রভাতফেরি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সেখানে উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।
এর পরপরই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল, ডিসিপ্লিনসমূহ, আবাসিক হলসমূহ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, অফিসার্স কল্যাণ পরিষদ ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক কেন্দ্রসহ আশপাশের স্কুল-কলেজের শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রী ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে মুক্তমঞ্চে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. ফিরোজ আহমদের সভাপতিত্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান, ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ বক্তব্য রাখেন।
সভায় উপাচার্য ফায়েক উজ্জামান বলেন, মাতৃভাষা সৃষ্টিকর্তার দান। তাই কোনো ভাষাকে অবজ্ঞা করা যাবে না। মাতৃভাষাকে ভালোবাসতে হবে, মর্যাদা দিতে হবে এবং সকল ক্ষেত্রে মাতৃভাষা চর্চায় এগিয়ে আসতে হবে। মাতৃভাষা চর্চা বা ব্যবহারে ধর্মের সঙ্গে কোনো সাংঘর্ষিকতা নেই। আসলে মাতৃভাষাকে আমাদের মননে স্থান দিতে হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালেই ঘোষণা দিয়েছিলেন আমরা যেদিন ক্ষমতায় আসবো সেদিন থেকেই বাংলা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চালু হবে, আর কোনো ঘোষণা লাগবে না।
উপাচার্য ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমিতে একুশের আলোচনা অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতার কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি সেদিন পৃথিবীর জ্ঞানরাজ্যে টিকে থাকতে বাংলাভাষা চর্চা ও প্রসারে সর্ম্পকে জ্ঞানলাভে অনুবাদকেন্দ্র গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছিলেন। তারপর বাংলা একাডেমিতে অনুবাদকেন্দ্র খোলা হলেও পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে তা বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্রমেই এতদাঞ্চলের সাংস্কৃতিক সূতিকাগারে পরিণত হচ্ছে। এ সুযোগ অবাধ ও উন্মুক্ত রাখতে হবে।
এর আগে উপাচার্য আইন ডিসিপ্লিনের উদ্যোগে মুদ্রিত একুশের স্মরণিকা দেয়াল ভাঙার গান এর তৃতীয় সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করেন।
ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ বলেন, প্রত্যেক জাতির আত্মপরিচয়ের উপাদান থাকে, আর তা হচ্ছে ওই জাতির ভাষা ও সংস্কৃতি। বাঙালির হাজার বা তারও কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসে দেখা যাবে সে প্রতিনিয়ত বহিরাগত শক্র, শাসকগোষ্ঠী, দখলদারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। চিরকাল বাঙালি সংগ্রাম করে টিকে থেকেছে এবং সে অন্য ভাষা থেকে গ্রহণ করেছে কিন্তু নিজ ভাষাকে বর্জন করেনি। আরও একটি দিক লক্ষ্য করা যায় তা হচ্ছে বহিরাগত শক্তি এদেশে এসে শাসন করেছে, সম্রাজ্য বিস্তার করেছে। কিন্তু তারপরও তারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বিকাশে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে এবং এ ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে কিছু নিয়েছে। তিনি শুদ্ধভাবে বাংলা চর্চা এবং বিশেষ করে কারিগরি ও চিকিৎসা বিদ্যায় বাংলা চর্চার ওপর জোর দেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে দেশাত্ববোধক গান, কবিতা আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এছাড়া এবার জার্নালিজম ক্লাবের উদ্যোগে ব্যাতিক্রমধর্মী ‘শুদ্ধ বাংলা লিখন প্রতিযোগিতা’ আয়োজন করা হয়।
এ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ।
এদিকে দিবসটিতে বাদ যোহর ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯
এমআরএম/আরআইএস/