ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বেনাপোলের ‘নো-ম্যানস ল্যান্ডে’ ২ বাংলার ২১ মিলনমেলা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৯
বেনাপোলের ‘নো-ম্যানস ল্যান্ডে’ ২ বাংলার ২১ মিলনমেলা দুই বাংলার মিলনমেলায় অতিথিরা, ছবি: বাংলানিউজ

বেনাপোল (যশোর): ‘একই আকাশ, একই বাতাস, এক হৃদয়ে একই তো শ্বাস’- এই শ্লোগান নিয়ে এবারও দুই বাংলার হাজার হাজার ভাষাপ্রেমীর একুশের মিলনমেলা বসেছিল বেনাপোল সীমান্তে ভারত-বাংলাদেশ ‘নো-ম্যানস ল্যান্ড’ এলাকায়।

জায়গাটা কারও নয়। ‘নো-ম্যানস ল্যান্ড’, কোনো দেশের ঠিকানা নেই সেখানে।

এ দিন শুধুই একুশের। দু’দেশের আপামর মানুষের।

দেখা গেছে, কড়া চোখের নজরদারি নেই। একইসঙ্গে উড়ছে বাংলাদেশ-ভারতের জাতীয় পতাকা। দু’দেশের ভাষাপ্রেমীরা গেয়ে চলেছেন, ‘সবকটা জানালা খুলে দাও না, ওরা আসবে চুপি চুপি’, যেনো কাঁটাতার ছিঁড়ে ফেলার নিভৃত আর্জি’।

একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরে আপন মনে কেঁদে চলেছেন কেউ। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর (বিএসএফ) সৈনিকদের  সামনেই দু’দেশের মানুষ শহীদ দিবস পালন করেন। চেনা-অচেনার কাঁটাতারের দূরত্বটা মুছে যায় এ দিন। বাংলাদেশি যুবক জড়িয়ে ধরছেন হিন্দিভাষী বিএসএফ জওয়ানকে। বুকে ব্যাজ পরিয়ে দিচ্ছেন। তাতে লেখা, ‘লাখো শহিদের রক্তে গড়া আমাদের এই বাংলা ভাষা’।  বুঝে না বুঝে জওয়ানেরও চোখে জল। তাদের অপলক দৃষ্টিতে শুধুই বিস্ময় আর শ্রদ্ধা।

সালাম, বরকত, রফিকদের স্মরণে তৈরি অস্থায়ী বেদি ফুলের ভারে নুয়ে পড়ছে। চলছে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ সে গানের সঙ্গে জনস্রোত। ঠিক যেনো ঢাকার জগন্নাথ হলের সেই বেদি হয়ে উঠেছে সীমান্তের ওই ফুল ঢাকা মঞ্চ।

যুবকদের অনেকের মাথায়ই কালো ফেট্টি, একুশের স্মারক। গালে তেরঙা পতাকা বা লাল-সবুজের আঁকা পতাকা দেখে ভুল হয়ে যায় কে কোন দেশি। গানের পাশাপাশি চলছে পথ-নাটক, কবিতা। আলোচনা ও আবেগে দু’দেশের কয়েক হাজার মানুষের বাঁধনহারা ছেলেমানুষির কাছে হার মানে নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনি। কিছুক্ষণের জন্য হলেও মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে যেনো দুই বাংলা। আন্তর্জাতিক সীমারেখা মুছে জন্ম হয়েছে অন্য এক বাংলার। যার স্বপ্ন এখনও দেখেন দু’বাংলার বহু ঘর হারানো মানুষ।

দুই বাংলার মানুষের কাছে এই ছবিটা আজ খুবই পরিচিত। এই দিনটির জন্য বহু মানুষ বছরভর অপেক্ষায় থাকেন। ভিন দেশের বন্ধুতে ওই একটি দিনই তো কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখবার সুযোগ মেলে। একদিকে, যেমন যশোর, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা থেকে বেনাপোল সীমান্তে এ দিনে ছুটে এসেছিলেন, তেমনই বনগাঁ, কলকাতাসহ তার আশপাশের বিভিন্ন মফস্বলের ভাষাপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল এ দিন।

২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় নো-ম্যানস ল্যান্ডে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে দুই দেশের ভাষাপ্রেমীরা ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে আলোচনা সভা, রক্তদান কর্মসূচি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এতে আমন্ত্রিত অতিথিরা তাদের বক্তব্যে বলেন, দেশ বিভক্তি হলেও ভাষার পরিবর্তন হয়নি। ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন। স্বাধীনতার জন্য জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। এতো ত্যাগের নজির পৃথিবীতে অন্য কারোর নেই। এজন্য বাংলা ভাষা-ভাষীরা আজ গর্বিত জাতি। চিরদিন মানুষ শ্রদ্ধাভরে ভাষা শহীদদের স্মরণ করবে।

এবার দুই বাংলার যৌথ ভাষা দিবস অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে প্রধান অতিথি ছিলেন- পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, বিশেষ অতিথি ছিলেন- শার্শার সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীন, বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরী, উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান।

ভারতের পক্ষে ছিলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী জ্যতিপ্রিয় মল্লিক, বনগাঁ লোকসভার বিধায়ক মত্যা মমতা ঠাকুর, উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা পরিষদের সভাপতি বীনা মণ্ডল, বনগাঁ বিধানসভার বিধায়ক বিশ্বজিত দাস, পৌরসভার প্রধান জ্যোৎস্না আঢ্য ও সিআইসি দমদম পৌরসভার রিংকু দে দত্ত।

এছাড়া ছিলেন, ভাষা সৈনিক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ ভাষা আন্দোলন কেন্দ্রের পরিচালক এসআর মাহাবুব, সংগীতশিল্পী মঈনুল আহসান নোবেল, নূরজাহান আলীম ও পৗষালী ব্যানার্জি।

২০০২ সালে বেনাপোলের সরগম সংগীত একাডেমি ও ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা ২১ উদযাপন পরিষদ সর্বপ্রথম দুই বাংলার যৌথ মাতৃভাষা দিবস পালনের সূচনা করে। পরবর্তীতে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ২০১১ সাল থেকে বেনাপোল পৌরসভা আর ভারতের বনগাঁ পৌরসভার যৌথ আয়োজনে হয়ে আসছিল এই ২১ উদযাপন। এবার যৌথ ২১ আয়োজন করেছেন এমপি শেখ আফিল উদ্দিন ও  বঁনগা পৌরসভা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।