বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অমর একুশে শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি বলবো আদালতের রায়টা যদি কেউ ইংরেজিতেও লিখতে চান- লিখতে পারেন।
তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের যারা আদালতে আছেন তারা যদি মাতৃভাষায় লেখার অভ্যাসটা করেন, সেটা অন্তত স্বল্প শিক্ষিত যারা তাদের জন্য সুবিধা হবে, রায় পড়ে যেন বুঝতে পারেন এখানে বিচারক কি লিখেছেন, কি বলতে চেয়েছেন। আইনজীবীর ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে, নিজেও একটু বুঝতে পারবে- রায়টা কি আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরেকটা বিষয় হলো আদালতের রায়- উচ্চ আদালতের রায় নাকি ইংরেজিতে। আমাদের দেশে এখন না হয় আমরা শিক্ষার হার বাড়িয়েছি। কিন্তু ৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন অক্ষর জ্ঞান সম্পন্নই ছিল মাত্র ৪৫ ভাগ। অধিকাংশ মানুষ বাংলা ভাষাতেও লেখাপড়া জানতো না।
তিনি বলেন, আর ইংরেজি যে রায়টা দেওয়া হয় সেই রায়ে কি বললো এজন্য নির্ভর করতে হয় আইনজীবীর ওপর। তিনি (আইনজীবী) যা বুঝিয়ে দেবেন সেটাই বুঝতে হবে, নিজে পড়ে জানার কোনো সুযোগ তার থাকে না। অনেক সময়ই তাদেরকে হয়রানির শিকার হতে হয়। অথবা তাদের অন্যভাবে ব্যবহারও করা হয়।
মাতৃভাষা ভালোভাবে শেখা ও চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, মাতৃভাষায় শিক্ষা, মাতৃভাষা জানা, এটি অপরিহার্য। আজকে বিশ্ব-গ্লোবাল ভিলেজ। আমাদের যোগাযোগটা, ভাষাগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। পৃথিবীর সব দেশে কিন্তু নিজের ভাষা শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে একটা দ্বিতীয় ভাষা শিক্ষা নেয়। কাজেই দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে অন্য ভাষা শিক্ষার সুযোগ কিন্তু আমাদের দেশে আছে।
তিনি বলেন, এরইমধ্যে ৯টি ভাষা দিয়ে একটি অ্যাপস তৈরি করে দিয়েছি আমরা। এখন বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ইংরেজি একটা মাধ্যম হয়ে গেছে সারা বিশ্বে। কাজেই আমাদের দেশে এটা দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে শিখতে পারে। বাংলা ভাষা, মাতৃভাষা, যে ভাষার জন্য আমরা জীবন দিয়েছি, সেই ভাষাটাও সবাই যাতে ভালোভাবে শেখে সেই ব্যবস্থাটাও করা একান্তভাবে প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
শুদ্ধ বাংলাভাষা চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশে একেক অঞ্চলে একেক ধরনের কথা বলি। এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা অফিসিয়াল একটা ভাষা ব্যবহার করি। যে ভাষাটা প্রমিত বাংলা। এরইমধ্যে আমাদের বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছে। সেজন্য বাংলা একাডেমিকেও ধন্যবাদ জানাই। একটা সুষ্ঠুভাষা যেটা প্রচলন থাকবে।
তিনি বলেন, আমরা যারা আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করি সেটাকে একেবারে বাদ দেওয়া ঠিক না। বাদ দিলে আমাদের নিজেদের অস্তিত্বই থাকে না।
একুশের চেতনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশ আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই একুশের আন্দোলন থেকে শুরু করে আমরা একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯
এমইউএম/জেডএস