ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সেবাদানে ব্যর্থ সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন থেকে ক্ষতিপূরণ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৯
সেবাদানে ব্যর্থ সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন থেকে ক্ষতিপূরণ আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন দুদক চেয়ারম্যান-ছবি-বাংলানিউজ

ঢাকা: সেবাপ্রদানে ব্যর্থ সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে সেবাপ্রার্থীদের দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় তিনি এ অভিমত জানান।

এসময় তিনি রাজধানীর চকবাজারের মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং আহতদের আশু আরোগ্য কামনাসহ নিহত এবং আহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

 

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমরা ইতিহাস জানি কিন্তু তা মানি না, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হয় জানি, কিন্তু নেই না।  

২১শে ফেব্রুয়ারি কি শুধু বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করার আন্দোলন ছিল- এমন প্রশ্ন রেখে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এটি ছিল অন্যায়, শোষণ, নিপীড়ন এবং চরম অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে এবং ন্যায়ের পক্ষে সমন্বিত প্রতিবাদের বহিঃপ্রকাশ। আমরা যদি এই আন্দোলন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতাম, তাহলে আমাদের এই পবিত্র মাটিতে প্রতিটি সংস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির বাসা বাঁধতে পারতো না।  

তিনি বলেন, প্রতিটি গণকর্মচারীকে নির্ধারিত সময়ে সেবা প্রদান করার কথা,  জনগণ নির্ধারিত সময়ে তা  পাচ্ছেন না। এসময় দুদক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা কেন নির্ধারিত সময়ে অভিযোগের অনুসন্ধান বা তদন্ত সম্পন্ন করতে পারছেন না। সব একই সূত্রে গাঁথা। এর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত  তীব্র প্রতিবাদ নেই। তবে অবশ্যই প্রতিবাদ হবে। আমরা যদি ঠিকমতো কাজ না করি, তাহলে এমন  প্রতিবাদ হবে যা  কেউ ঠেকাতে পারবে না। ৫২ এর প্রতিবাদের প্রায় ১৯ বছর পরে ৭১ এর প্রতিবাদ সবকিছুকে ছাপিয়ে একটি সর্বত্মক জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে।  

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা দেশ পেয়েছি, স্বাধীনতা পেয়েছি। আমরা যদি জনগণের রোষের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আরেকটা প্রতিবাদ না চাই, তাহলে অবশ্যই আমাদের আমিত্বের প্রতিযোগিতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সবসময় আমি ভালো থাকবো, আমার সন্তান ভালো থাকবে, আমিই শ্রেষ্ঠ-এই মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। আমরা কীভাবে ভালো থাকতে পারি, আমাদের সন্তানরা কীভাবে ভালো থাকবে এগুলো নিয়ে ভাবতে হবে।  

আমিত্ব এবং আমার শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করার প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের বিরত রাখার আহ্বান জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নইলে প্রতিবাদ হবেই এবং তা অপ্রতিরোধ্য।  

তিনি বলেন প্রতিটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ কিংবা সংস্থার শ্রেষ্ঠত্ব এবং আমিত্বের  অনাকাক্ষিত প্রভাব রয়েছে। বিভিন্ন বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতার পরিবর্তে অসহযোগিতার মনোভাব দেখা হয়। সবাই মিলে একই লক্ষ্য অর্জনে সম্মিলিতভাবে কাজ না করলে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো অসম্ভব। ঠিক সেরকম সব পর্যায় থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একযোগে সবাইকে কাজ করতে হবে এবং এটি হলো ২১-এর চেতনার শিক্ষা। আজকের আলোচনা সভা তখনই সার্থক হবে, যদি আমরা সবাই সময়মতো সবার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করি এবং জনসেবায় আত্মনিয়োগ করি।

সময়ের মধ্যে তদন্ত বা অনুসন্ধান করতে না পারলে দুদকের সংশ্লিষ্ট কমকর্তাদের বেতন-ভাতা থেকে ক্ষতিপূরণে অর্থ আদায় করা যায় কি না ভেবে দেখা হবে জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সরকারি সংস্থাগুলোতে যারা সময়মতো সরকারি সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন তাদের বেতন থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়টিও সংশ্লিষ্টরা ভাবতে পারেন।  

তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের কাছে যেসব নাগরিক আসেন তাদের প্রত্যেককে সম্মান এবং শ্রদ্ধা করতে হবে।  আপনারা যদি সময়মতো অনুসন্ধান বা তদন্ত শেষ করেন তাহলেই অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত সম্মানবোধ করবেন।  

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ভুল স্বীকার করা লজ্জার কোনো বিষয় নয়। তবে ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। এটা   করা না হলে বিষয়টি অবশ্যই লজ্জার।  অনিচ্ছাকৃত ভুল এবং ইচ্ছাকৃত ভুলের ভিন্ন ভিন্ন তাৎপর্য রয়েছে জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এটা অনুধাবন করার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। তাই সব ভুলকেই অনিচ্ছাকৃত ভুল বলে চালিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।

আলোচনা সভায় দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ২১-এর চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে  সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে।  
তিনি ২১-এর চেতনাকে শুধু মুখে উচ্চারণ না করে, স্ব-স্ব আচরণেও এর প্রতিফলন ঘটানোর আহ্বান জানান।  

এসময় দুদক সচিব মোহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত রেখে স্ব-স্ব অবস্থান থেকে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) সারোয়ার মাহমুদ, পরিচালক মো. গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী, উপ-পরিচালক মো. তালেবুর রহমান প্রমুখ। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুদক মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী, মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মো. মইদুল ইসলাম, মহাপরিচালক (তদন্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমান, পরিচালক এবং উপ-পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯
আরএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।