ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ক্যান্টিন রেখে রেস্টুরেন্টে যান কেন?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৯
ক্যান্টিন রেখে রেস্টুরেন্টে যান কেন? প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান-ছবি-বাংলানিউজ

ঢাকা: যেসব কর্মকর্তা ঘুষ নেন কিংবা দুর্নীতি করেন তারা এবং যারা দায়িত্ব পালন করেন না কিংবা করতে পারেন না তারা উভয়ই অসৎ বলে মনে করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের কর্মকর্তাদের ভূমি ব্যবস্থাপনা শীর্ষক এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান এ মন্তব্য করেন।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিপূর্ণভাবে ডকুমেন্ট তথা কাগজনির্ভর।

আবার দুদক আইন অনুসারে অনুসন্ধান বা তদন্ত কাজে কমিশনের বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। যে কোনো ব্যক্তিকে অনুসন্ধান বা তদন্ত সংশ্লিষ্ট তথ্য সরবরাহ করার জন্য আইনি নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে কমিশনের। তারপরও কেউ এ নির্দেশ পরিপালন না করলে তার বিরুদ্ধে মামলা করে আইনি প্রক্রিয়ায় কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড উভয় প্রকার দণ্ড দেওয়ার বিধানও রয়েছে। তারপরও কেন কমিশনের অনুসন্ধান বা তদন্ত আইন অনুসারে নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন হচ্ছে না, কেন কিছু কর্মকর্তা নির্ধারিত সময়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারছেন না? এর দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরই  নিতে হবে।  

তিনি বলেন, নিজে দুর্নীতিমুক্ত না থাকলে এবং চলন-বলন তথা আচরণের  উৎকর্ষতা না থাকলে কেউ শ্রদ্ধা করে না। এটাও সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। সবাই পদোন্নতি পেতে চান, কিন্তু দায়িত্ব নিতে চান না।  

কমিশন ব্যাপকভাবে পদোন্নতি দিয়েছে জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এখন সমন্বিতভাবে কাজ করার সময়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বিত কাজের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ে।  

তিনি বলেন, সময়ের মধ্যে স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন না করার ব্যর্থতার জন্য কেউ কেউ হাজারও অজুহাত দেখান। আবার এই প্রতিষ্ঠানেরই অনেক মেধাবী সৎ কর্মকর্তা রয়েছেন যারা নির্ধারিত সময়েই মানসম্পন্ন তদন্ত সম্পন্ন করেছেন। তাহলে যারা ব্যর্থ হচ্ছেন তাদের সম্পর্কে মানুষের ধারণা কি  হতে পারে। নিজেরাই নিজেদের মূল্যায়ন করুন।  

দুদকের নিজস্ব ক্যান্টিন রয়েছে তারপরও কেন আমাদের কেউ কেউ অন্য হোটেলে খেতে যান? আমি এর কারণ বুঝি না। ব্যক্তি কখনও অন্য ব্যক্তিকে পরিবর্তন করতে পারে না জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নিজেই নিজেকে পরিবর্তন করতে হয়।  

তিনি বলেন, পদ্ধতিগত কারণেই এদেশে ঘুষ খাওয়া সবচেয়ে সহজ কাজ। যাদের মান-সম্মানের ভয় নেই তথা কোনো আত্মমর্যাদা নেই তাদের পক্ষে ঘুষ খাওয়া সত্যিই সহজ। এই লজ্জাহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে হলে দুদক কর্মকর্তাদের এমনভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে যাতে ঘুষখোরদের আইনের আওতায় এনে লজ্জা পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি পদ্ধতিগত সংস্কারের জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে ২৭টি প্রতিষ্ঠানি টিম গঠন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ শ্রম ও সময় ব্যয় করছি। আমাদের উদ্দেশ্য ঘুষ-দর্নীতির ফাঁক-ফোকর বন্ধ করা।  

অসাধারণ জ্ঞান, হোমওয়ার্ক এবং কর্মস্পৃহার সমন্বয় না থাকলে কার্যকর অনুসন্ধান বা তদন্ত করা যায় না জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এজন্য প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই।  

তিনি বলেন, আমরা হাজার হাজার কর্মকর্তাকে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। প্রশিক্ষণের এই শিক্ষাগুলো যাতে নিজ নিজ কর্মে প্রতিফলন ঘটে সেগুলো মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ গ্রহণে যারা ব্যর্থ হবেন তাদের কমিশন আইন অনুযায়ী অন্য সংস্থায় পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে যে পরীক্ষা হবে তার ফলাফল ডোসিয়ারে সংরক্ষণ করা হবে। পদোন্নতির বিদ্যমান নীতিমালা পরিবর্তন করে প্রশিক্ষণের ফলাফল এতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

তিনি তাৎক্ষণিকভাবে দুদকের প্রশাসন অনুবিভাগের মহাপরিচালককে তার এসব নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা প্রদান করেন।

তিনি বলেন, দুদকে অনেক ভালো কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা সুনিপুণভাবে নির্মোহ থেকে মামলার তদন্ত করেন। তাদের বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষই শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু যারা ব্যর্থ হচ্ছেন তাদের নিয়ে মানুষ কি ভাবছে, তা ভেবে দেখতে হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী।  

কমিশনের বিভিন্ন পদমর্যাদার ৩০ কর্মকর্তা এ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৯
আরএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।