নিহত হাবিবুর রহমান হাবিব লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের বুমকা গ্রামের কামার আব্দুল গনির ছেলে। গ্রেফতারকৃত এরশাদ ওই এলাকার নুরজামালের ছেলে।
রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ক্লু-লেস এ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোজাম্মেল হক।
গ্রেফতারকৃত এরশাদের দেয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বাংলানিউজকে জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বাবার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন হাবিবুর রহমান হাবিব। দিনভর বাবার হাতে তৈরি দা-বটি, কুড়াল, কোদাল, কাস্তে, বেকিসহ সব মালামাল বিক্রির জন্য কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন বাজারে পাইকারি বিক্রি করতে থাকেন হাবিব। শিক্ষিত হাবিব তাদের কামারি ব্যবসায় মনোনিবেশ ও বাজারজাত করায় তার পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয় ক্রেতারা। ফলে চাচাত ভাই এরশাদের কামারি ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দেয়।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হাবিবকে হত্যার পরিকল্পনা করেন এরশাদ। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতেই গত বছর ২৬ আক্টোবর রাতে কৌশলে বাড়ির পাশে ধরলা নদীর পাড়ে শীবেরকুটি কলাবাগানে নির্জন এলাকায় হাবিবকে ডেকে নেন এরশাদ। এরপর গল্পের এক ফাঁকে লোহা পেটানো বড় হাতুড়ি দিয়ে মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সটকে পড়েন এরশাদ।
পরদিন স্থানীয়দের দেওয়া খবরে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। তাতে স্বাক্ষরও করেন এরশাদ। এ ঘটনায় নিহতের বাবা আব্দুল গনি বাদী হয়ে অজ্ঞতনামা আসামি করে সদর থানায় মামলা (৩৭) দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার ওসি (তদন্ত) রায়হান আলী সাড়ে তিন মাসেও কোনো ক্লু উৎঘাটন করতে পারেননি।
অবশেষে ক্লু-লেস এ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করে সদর থানার পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোজাম্মেল হককে দায়িত্ব দেন পুলিশ সুপার। এরপর নিহত হাবিবের ফোন কলের লিস্টসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তদন্ত করে মাত্র ৭ দিনে হত্যার ক্লু উৎঘাটনে সমর্থন হন তদন্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক। এরপর ঢাকায় অবস্থানরত এরশাদকে গ্রেফতার করে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাতুড়িটি জব্দ করে শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) আদালতে হাজির করে জবানবন্দি নেন বিচারক। এ সময় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদি হাসান মণ্ডলের আদালতে জবানবন্দিতে হত্যার দায় স্বীকার করেন গ্রেফতারকৃত এরশাদ।
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক বাংলানিউজকে জানান, এর আগে ক্লুলেস স্বপন হত্যা মামলা ৬ দিনে ক্লু উদ্ধার করায় হাবিব হত্যা মামলাটির দায়িত্বও পরিদর্শক মোজাম্মেল হককে দেয়া হয়। এ ক্লুলেস হত্যা মামলার ক্লু উৎঘাটনসহ এরশাদকে মাত্র ৭ দিনে গ্রেফতার করতে সক্ষম হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। মূলত ব্যবসায়ীক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণেই এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলেও দাবি করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৯
আরএ