ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দেশের উন্নয়নে তারা শ্রম-পুঁজি দিতে চান মাতৃভূমিতে

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯
দেশের উন্নয়নে তারা শ্রম-পুঁজি দিতে চান মাতৃভূমিতে ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ফয়সাল কাদের (৪৬)। জন্মস্থান নাটোর। ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ২৮ বছর আগে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। দীর্ঘদিনের শ্রম-মেধা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে গড়ে তুলেছেন আইটি ফার্ম-টেকনাফ।

এই ফার্মের সভাপতি ফয়সাল কাদের। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিস (আইআরএস) ট্যাক্স রিফান্ড থেকে করদাতাদের প্রাপ্ত অর্থ স্ব স্ব ব্যাংক হিসাবে আসতে শুরু করে এর মাধ্যমে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং আইআরএস-এর কাজ একই।

আইআরএস-এর সাইবার নিরাপত্বায় কাজ করছে টেকনাফ। একইভাবে এনবিআর-কে শক্তিশালীকরণসহ আর্থিক অবকাঠামোর সাইবার ঝুঁকি নিরোশনে কাজ করতে চায় টেকনাফ।

টেকনাফের সভাপতি ফয়সাল কাদের বলেন, 'আমরা যেখানেই থাকি মন পড়ে থাকে মাতৃভূমিতে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের রাজস্ব আহরণে কাজ করছি। একইভাবে বাংলাদেশে কাজ করতে চায়। সরকার আমাদের আমন্ত্রণ করেছে সেই সুবাদে দেশে এসেছি। এনবিআর-এর আর্থিক নিরাপত্বায় কাজ করতে চাই। '

আরেক প্রবাসী আলিম আবদুল (৫৬)। জন্মস্থান মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর। ৩১ বছর বয়সে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাইবার নিরাপত্বায় কাজ করছেন। দীর্ঘদিন পরে সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করে। যার মধ্যে ২৪ লাখ প্রবাসী স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের অবদান মোট জিডিপির ১২ শতাংশ। আলিম আবদুল বলেন, 'আমাদের দেশ অনেক এগিয়েছে। দেশের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শেখা সকল শিক্ষা দেশের কল্যাণে প্রয়োগ করতে চায়। দেশের আর্থিক অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করতে চায়। এর জন্য সকল ধরণের সহযোগিতা করবো। '

ফয়সাল কাদের ও আলিম আবদুলের মতো হাজারো মেধাবী অদিবাসী বাংলাদেশে এসেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা প্রকৌশলী তথা মেধাবী এসব মানুষদের জাতীয় উন্নয়নে সম্পৃক্তকরণের ক্ষেত্র তৈরির মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নকে তরান্বিত করার অভিপ্রায়ে ব্যক্ত করেছে সরকার। সেই লক্ষ্যে ২৬-২৭ ফেব্রুয়ারি দু’দিন ব্যাপী ‘কনভেনশন অব এনআরবি ইঞ্জিনিয়ার্স’ (কোন) শীর্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

এবারের সম্মেলনে জাতীয় পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, স্যাটেলাইট, সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া ন্যানো প্রযুক্তি, টেকসই পরিবেশ উন্নয়ন, নগর পরিকল্পনা উন্নয়ন, টেলিযোগাযোগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এবং কৃষি প্রযুক্তি উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনা হবে।

ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) এবং ব্রীজ টু বাংলাদেশ এই সম্মেলন আয়োজন করছে। বিশ্বের প্রায় ৩০ দেশ থেকে প্রকৌশলীগণ এই সম্মেলনে অংশ নেবে। দু’দিনের সম্মেলনে ৯টি বিজনেস সেশন অনুষ্ঠিত হবে। প্রকল্প মূল্যায়ন, প্রকল্প প্রণয়ন ও চূড়ান্ত প্রক্রিয়া বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার খাত নিয়ে আলোচনা হবে। ফলে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে  একটি মেলবন্ধন তৈরি হবে বলে জানা গেছে।

ইআরডির ভারপ্রাপ্ত সচিব মনোয়ার আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, 'প্রায় ৩০ দেশ থেকে হাজারো প্রবাসী সম্মেলনে অংশ নেবেন। তারা সবাই দেশের উন্নয়নে নানামুখী অবদান রাখতে চান। সরকারও তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে আগ্রহী। '

তিনি বলেন, 'বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়েছে। যা গত দু’বছরে ৭ শতাংশের উপরে অর্জিত হয়েছে। গত ২০১৮ তে প্রবৃদ্ধির মাত্রা ছিলো ৭.৮৬%। সরকারের গৃহিত উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে দারিদ্র দূরীকরণ, মানব সম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা তিনটি সূচকে মানদন্ড অতিক্রম করে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তোরণের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা(এসডিজি) অর্জন করেছে বাংলাদেশে। ফলে মেধাবীরা মাতৃভূমিতে এসে শ্রম ও পুঁজি ব্যয় করতে চান। '

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে বাংলাদেশ অনেক পথ পাড়ি দিয়েছে। এখন বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্শনীয়। আমাদের মেধাবী সন্তানেরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বুকে সুখের সন্ধানে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন। এখন তারাও দেশের উন্নয়নে কাজ করতে চায়। আমরাও আমাদের ঘরের ছেলেদের মেধা-শ্রম কাজে লাগিয়ে জাতীয় উন্নয়ন আরো বেগবান করতে চায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা প্রকৌশলী অনাবাসী বাংলাদেশিদের জাতীয় উন্নয়নে সম্পৃক্ত করায় আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। '

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯
এমআইএস/এইচএমএস/এমকেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।