একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯টি দলই অংশ নিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি হয়। অথচ এর মাত্র দুই মাস পরে ডিএনসিসি’র মেয়র পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে মাত্র চারটি দল।
বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে ভোটারদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে—তাতে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ তৈরি করতে না পারার পেছনে চারটি কারণ উঠে এসেছে।
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণটি হচ্ছে— এ নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়া। তারপর অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থাহীনতা, প্রশাসনের প্রতি আস্থাহীনতা এবং নতুন নির্বাচিতদের স্বল্প মেয়াদ।
প্রার্থী ও প্রচার:
সাবেক মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর ২০১৮ সালে নির্বাচনে তফসিল দিলে সে সময় বিএনপিসহ বেশ কিছু দল প্রার্থী দিয়েছিলো। ওই সময় বেশ আগ্রহ দেখা গেছে ভোটারদের মাঝে। কিন্তু নির্বাচনটি প্রায় এক বছর স্থগিত থাকার পর ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তফসিল দিলে তাতে প্রার্থী দিয়েছে মাত্র চারটি দল। বিএনপিসহ অধিকাংশ দলই প্রার্থী দেয়নি। আর সব মিলিয়ে পাঁচজন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নেই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রার্থীও। পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির মো. শাফিন আহমেদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টির শাহীন খান ও স্বতন্ত্র মো. আব্দুর রহিম।
মেয়র পদের এসব প্রার্থীদের মধ্যে আতিকুল ইসলাম ছাড়া অন্যদের তেমন কোনো প্রচার কাজও নেই বলতে গেলে। তবে কাউন্সিলর পদে উত্তরের ২০টি ওয়ার্ড এবং দক্ষিণের ১৮টি ওয়ার্ডের প্রার্থীদের বরং বেশি প্রচার কাজ চালাতে দেখা গেছে। তাদের প্রচার কাজের কারণেই ডিসিসি নির্বাচন অনেকটা প্রকাশ্য হয়েছে।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিলের এ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্য দল সমর্থিত এবং স্বতন্ত্র নিয়ে ১৬জন প্রার্থী অংশ নিয়েছিলেন।
ইসির প্রতি আস্থাহীনতা:
নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ বলতে গেলে শেষ হয়ে গেছে সংসদ নির্বাচনে। সেখানে একটি বড় দলের মাত্র ছয়টি আসন পাওয়াকে বেশিভাগ ভোটার অবিশ্বাসের চোখে দেখছেন। তাদের মতে, বিএনপির মতো দলের এমন ভরাডুবি নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। যদিও এই নির্বাচন সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বলে অনেকেই মনে করছেন।
ভোটাররা মনে করছেন, নির্বাচন কমিশন সংসদ নির্বাচনে সঠিক ভূমিকা নিতে পারেনি। ভোটের দিন ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে টেলিভিশনগুলোর লাইভ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করেছে। বড় দলগুলোর প্রার্থীর এজেন্টকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি। প্রার্থীদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। এজন্য তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলেই মনে করছে অনেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা উত্তরের এক ভোটার বাংলানিউজকে বলেন, গত ছয়বার সংসদ নির্বাচনে ভোট দিয়েছি। এইবার আমার ভোট অন্যজন দিয়ে দিয়েছে। নির্বাচন বলতে কিছু আছে নাকি? আর মেয়র নির্বাচন মাত্র দেড় বছরের জন্য। ভোট হইলেই কি আর না হইলেই কী?
প্রশাসনের প্রতি আস্থাহীনতা:
ভোটাররা বলছেন, প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও ফল পাওয়া যায় না। সংসদ নির্বাচনে প্রশাসনের লোকবলই অনেক সময় নির্যাতন করেছে। অনেকেই দলীয় লোকবলকে নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের উপস্থিতিতে অনেক ভোটারকে কেন্দ্রেই যেতে দেওয়া হয়নি। এসব কারণে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছেন।
স্বল্প মেয়াদের নির্বাচন:
আসন্ন নির্বাচনটি হচ্ছে মাত্র দেড় বছরের জন্য। কেননা, উপ-নির্বাচনে মেয়র পদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে। নতুন ওয়ার্ডগুলোতে নির্বাচিতদের মেয়াদও হবে এমনই।
এসব নিয়ে ডিএনসিসি’র রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন করা। আমরা আইন অনুযায়ী নির্বাচন করছি। নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ তৈরি করা কিংবা কে অংশ নেবে কিংবা কে অংশ নেবে না, সেটা দেখার বিষয় আমাদের না। আমরা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য সকল ব্যবস্থা নিয়েছি। আইনের কোনো ব্যত্যয় হলে, সঙ্গে সঙ্গে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিএনসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ৫৪টি ওয়ার্ডের ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন ভোটার ভোট দেওয়া সুযোগ পাবেন।
আর নতুন সৃষ্টি হওয়া ৩৭ নম্বর থেকে ৫৪ নম্বর পর্যন্ত ১৮টি ওয়ার্ডে ও ৬টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নির্বাচনে ৫ লাখ ৯০ হাজার ৭০৫ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন।
আর ডিএসসিসি’র ৫৮ থেকে ৭৫ নম্বর পর্যন্ত মোট ১৮টি সাধারণ ওয়ার্ডের ও ৬টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নির্বাচনে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৭৩৫ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন।
দুই সিটিতে কাউন্সিলর পদে দুই শতাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯
ইইউডি/এমজেএফ/এমকেএম