ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো এখনো অরক্ষিত

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো এখনো অরক্ষিত

রাঙামাটি: রাঙামাটিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো এখনো অরক্ষিত থেকে গেছে। দেশের স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হলেও স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো সংরক্ষেণে কাউকে কোনো ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর মধ্যে- জেলা শহরের রাঙামাটি স্টেশন ক্লাব, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এলাকা, কাঁঠালতলীর আলম ডক ইয়ার্ড এলাকা, রাঙামাটি ডিসি বাংলো ও রাঙামাটি সরকারি কলেজ এসব স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে। এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো হলো-

রাঙামাটি স্টেশন ক্লাব

রাঙামাটি জেলা শহরের আপার রাঙামাটি এলাকায় অবস্থিত ‘রাঙামাটি স্টেশন ক্লাব’। এ ক্লাবের মাঠে মুক্তিযুদ্ধের অস্থায়ী ট্রেনিং ক্যাম্প খোলা হয়েছিল। ওই ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপনে তৎকালীন জেলা প্রশাসক হোসেন তৌফিক ইমাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবদুস সামাদ, পুলিশ সুপার বজলুর রহমান ও মহকুমা প্রশাসক আবদুল আলীসহ রাঙামাটির বহু মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন।

রাঙামাটি স্টেশন ক্লাব

এ ক্লাবের মাঠে শুরু হয় রাইফেল ট্রেনিং ও ছাত্রদের ককটেল বানানোর প্রশিক্ষণ। বর্তমানে ক্লাবটি অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। ক্লাবটিতে নেই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত কোনো ফলক।

রাঙামাটি ডিসি বাংলো

তৎকালীন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক হোসেন তৌফিক ইমামের নেতৃত্বে ডিসি বাংলোতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য আলোচনা সভা ও দিক-নির্দেশনা দেওয়া হতো।

সভায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও ছাত্র নেতারা অংশ নিত। বর্তমানে এটি এখনো ‘ডিসি বাংলো’ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত হলেও এটি যে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি রাজনৈতিক আস্তানা ছিল তার কোনো চিহ্ন নেই। কেউ জানে না মুক্তিযাদ্ধারা তাদের প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধ পরিচালনার জন্য যাবতীয় সিদ্ধান্ত এ বাংলোতে বসে নিতেন।

রাঙামাটি সরকারি কলেজ

রাঙামাটি জেলার তৎকালীন প্রশাসক হোসেন তৌফিক ইমামের নেতৃত্বে রাঙামাটি সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের সব কেমিক্যাল ব্যবহৃত হতো বোমা বানানের জন্য। বর্তমানে কলেজটির রসায়ন বিভাগের ছাত্ররা জানে না তারা যে কেমিক্যাল ব্যবহার করছে সেই কেমিক্যাল ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধারা বোমা তৈরি করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তো। বর্তমানে রসায়ন বিভাগের এ কক্ষটিও অরক্ষিত থেকে গেছে।

রাঙামাটি সরকারি কলেজ

রাঙামাটি সরকারি কলেজের ক্যাম্পাসটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। এ কলেজের শিক্ষার্থীরা তখন আন্দোলন-সংগ্রামে মুখরিত করতো পুরো কলেজ ক্যাম্পাস। বর্তমানে কলেজটি থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত কোনো প্রতীক নেই।

আলম ডক ইয়ার্ড

রাঙামাটি শহরের কাঁঠালতলীর আলম ডক ইয়ার্ড এলাকার আলম ভবনটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ক্যাম্প। এখানে স্থাপিত হয়েছিল ওয়ারলেস সেন্টার। এখান থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হতো ওয়ারলেসের মাধ্যমে।

আলম ডক ইয়ার্ড

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাবার রান্না করা হতো এ ডক ইয়ার্ডেই। বর্তমানে এ এলাকা ও ভবনটি অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এলাকা

১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাঙামাটিকে হানাদারমুক্ত করে জেলা শহরের পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এলাকায় লাল-সবুজ পতাকা উড্ডয়ন করা হয়েছিল। এ এলাকায় সেসময় মিত্র বাহিনীর পূর্বাঞ্চল কমান্ডের অধিনায়ক জেনারেল সিং ওভান ও শেখ ফজলুল হক মণি ভারতীয় হেলিকপ্টারযোগে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড মাঠে (পুরাতন কোর্ট বিল্ডিং মাঠে) অবতরণ করেন। এখানে তাদের অভ্যর্থনা জানান তৎকালীন ছাত্রনেতা গৌতম দেওয়ান, আবদুর রশীদ, মো. ফিরোজ আহম্মদ, মনীষ দেওয়ানসহ হাজারো ছাত্র-জনতা। যেখান থেকে স্বাধীন দেশের পতাকা উড্ডয়ন করা হয়েছিল, বর্তমানে সে স্থানটি অরক্ষিত।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এলাকা

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির সদস্য সচিব ও মুক্তিযুদ্ধের সময় অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাবেক আহ্বায়ক সুনীল কান্তি দে বাংলানিউজকে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ করার জন্য আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কিছুটা সময় লাগছে।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ রাঙামাটি জেলার কমান্ডার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা রবার্ট রোনাল্ড পিন্টু বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্থানগুলো সংরক্ষণের জন্য আমরা অনেক চেষ্টা চালিয়েছিলাম। সেসময় কারও সহযোগিতা না পাওয়ায় সংরক্ষণ করা যায়নি। স্থানীয় প্রশাসন চাইলে স্মৃতিস্থানগুলো সংরক্ষণের জন্য তৎপরতা চালাতে পারে বলে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯
এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।