ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লিতে

নাজিম উদ্দিন ইমন, কেরানীগঞ্জ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯
অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লিতে

ঢাকা: রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরের পল্লিতে বিভিন্ন ধরনের ৩ হাজারের বেশি কারখানা রয়েছে এর মধ্যে বেশিরভাগই পোশাক সংশ্লিষ্ট। এছাড়া পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রির জন্য এ এলাকায় দোকান রয়েছে আরও প্রায় ৫ হাজার। এসব কারখানা ও দোকানে প্রায় আড়াই লাখ শ্রমিক কাজ করে। তবে অগ্নিকাণ্ডের মতো বড় কোনো দুর্ঘটনা ঠেকাতে এখানে নেই তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা। তারই সাম্প্রতিকতম নমুনা এখানকার এক প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ১৪ জনের মৃত্যু।

এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রামানন্দ সরকার বলেন, পোশাক কারখানার জন্য ব্যবহৃত যেসব ভবন বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি করা হয়নি সেগুলো পুনরায় সংস্কার করলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

এসব কারখানার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, তৈরি পোশাক শিল্পে বর্হিবিশ্বে ব্যাপক পরিচিত বাংলাদেশ।

বুড়িগঙ্গা তীরের শুভাঢ্যা ও আগানগর ইউনিয়নের চরকালীগঞ্জ, খেজুরবাগ, পার গেণ্ডারিয়া, কালীগঞ্জ, পূর্ব আগানগর, আগানগর, নাগরমহল ও ইস্পাহানি এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রচুর পোশাক কারখানা। দেশে তৈরি পোশাকের প্রায় ৭০ ভাগ চাহিদা মেটায় এসব কারখানা। তবে এ গার্মেন্টস পল্লির যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই খারাপ। ফলে এখানে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা স্থানীয়দের। যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে ফায়ার সার্ভিসকেও আগুন নেভাতে বেগ পেতে হবে।

এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পরিদর্শক আতিকুল আলম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমি একাধিকবার কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লি পরিদর্শন করেছি। তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। অথচ তারা কোনো নির্দেশনা মানতে চায় না। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ জ্বালালি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নির্দেশনা দিয়েছেন, যেসব ভবন নির্দেশনা মানবে না, তাদের সব ধরনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে।

কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রায় ৪০ বছর আগে গড়ে ওঠা এ গার্মেন্টস পল্লি ধীরে ধীরে বিস্তৃত হলেও এখানে কোনো রকম অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তবে নতুন যেসব মার্কেট হচ্ছে সেগুলো নিয়মকানুন মেনে হচ্ছে বলে জানান তারা। কেরানীগঞ্জ পোশাক পল্লির অগ্নি দুর্ঘটনা এড়াতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া কোনো পথ নেই বলে অভিমত তাদের।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. বাবুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লি আমাদের জন্য একটি গর্বের বিষয়। কিন্তু এ পল্লি গড়ে ওঠার সময় বেশির ভাগ ভবন ও কারখানায় অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এমনকি শুরুর দিকে যেসব ভবন করা হয়, সেগুলোর বিল্ডিং কোডও মানেনি।

কালিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মজিবর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের বাড়িঘর এখানেই। ২০ বছর আগেও গার্মেন্টস পল্লির পরিধি এত বড় ছিল না। গত কয়েক বছরে এটি বড় আকারে বিস্তার লাভ করলেও, সেই অনুযায়ী রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করা হয়নি। এ অবস্থায় এলাকায় আগুন লাগলে আমরা ঘর ছেড়ে পালানোরও সুযোগ পাবো না।

কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ও দোকান মালিক সমিতির সভাপতি শেখ স্বাধীন বলেন, প্রায় ৪০ বছর আগে এ পল্লি গড়ে উঠেছে। শুরুর দিকে এত কারখানা ছিল না। ধীরে ধীরে বেড়েছে। শুরুর দিকে কোন অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা না রাখায় এখন সচেতনতা বৃদ্ধি করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আমরা সব কারখানায় লিফলেট বিতরণ করছি। প্রতিটি দোকান ও কারখানায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯
এসই/এইচজে/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।