ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খুলনার মাঠে মাঠে ধান কাটার উৎসব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৯
খুলনার মাঠে মাঠে ধান কাটার উৎসব

খুলনা: দিগন্তজোড়া প্রান্তরে সোনালি ঢেউ। হিম হিম মৃদু বাতাসে পাকা ধানের শীষের দোলা মাঠের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। এর মাঝেই দেখা গেলো কাস্তে হাতে ব্যস্ত কৃষক।

মাঠের পর মাঠ এখন সোনালি রঙের পাকা ধানে ভরে আছে। যতদূর চোখ যায় হলুদ মাঠ।

এই মাঠ এখন রিক্ত হতে শুরু করেছে। মাঠে মাঠে শুরু হয়েছে ধান কাটা উৎসব।

খুলনার বটিয়াঘাটার বয়ার ভাঙ্গা গ্রামের মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটা। মাঠের পাকা ধান কেটে তুলতে হবে গোলায়। তাই ফসলের খেতে ধান কাটার ধুম পড়েছে। চারিদিকে পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ।

দীপঙ্কর নামে এক কৃষক বলেন, আমাগে এহন দম ফেলার ফুরসত নেই। নতুন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করতি হচ্ছে।

তিনি জানান, মাঠজুড়ে ধান কাটার মহোৎসব শুরু হয়েছে। কয়েক বছর ধরে গ্রামে আর ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যায় না। যে কারণে অনেক গৃহিণীরও মাঠে এসে ধান কাটতে হচ্ছে।  
ধানের মাঠ
তারপরও যা হয়েছে তার যেন ন্যায্যমূল্য পায় কৃষকরা সেই দাবি জানান তিনি।

বরুণ পাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল্লাহ বলেন, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন আমন ধান কাটার উৎসব চলছে। ফলন মোটামুটি ভালো হওয়ায় কৃষকরা খুশি। কিন্তু ফড়িয়া বা মধ্যস্বত্বভোগীদের তৎপরতায় ফসলের কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাওয়া নিয়ে কৃষকদের মধ্যে রয়েছে শঙ্কা।

তিনি অভিযোগ করেন, গত কয়েক বছর ধরে তারা ধানের ন্যায্যমূল্য পান না।

বটিয়াঘাটা উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠে সোনালি রঙের পাকা আমন ধানের ক্ষেত। কোনো কোনো ক্ষেতে কৃষক ধান কাটছেন। আবার কোনো কোনো ক্ষেতের ধান এখনও পুরোপুরি পাকেনি। কৃষকেরা কেউ ধান কাটছেন, কেউ বাঁধছেন আঁটি। আবার কেউবা মাথায় করে ধানের আঁটি নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ির উঠানে। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই কারও।

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষাণ-কৃষাণীদিঘলিয়া উপজেলার পারমচন্দ্র পুরের আমন চাষি বাদশা গাজী বলেন, শীতের সকাল থেকে পড়ন্ত বেলা পর্যন্ত মাঠে মাঠে ফসল কাটছেন কৃষকরা। একদিকে কৃষকরা ধান কেটে বাড়ির আঙিনায় জড়ো করছেন। অন্যদিকে গরু বা মিশন দিয়ে একই সঙ্গে মাড়াই কাজ সম্পন্ন করে নিচ্ছেন কৃষকরা। মাড়াই শেষে বাতাসে ধান উড়িয়ে বাকি কাজটুকু সম্পন্ন করে গোলায় তোলার কাজে কৃষাণীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

তিনি জানান, সরকার আমন ধানের দাম আগেভাগে নির্ধারণ করে দিলে কৃষক ভালো দাম পাবেন। গত কয় বছর তারা আমনের ন্যায্যমূল্য পাননি। আশা করছেন এবার ন্যায্যমূল্য পাবেন।

তবে, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর আঘাত এবং লবণ পানির কারণে রূপসার জাবুসা, বটিয়াঘাটার খারাবাদ, ডুমুরিয়া ও দাকোপসহ বিভিন্ন এলাকায় আমনে পোকার আক্রমণে ধান নষ্ট হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

পোকার আক্রমণ আর বুলবুলের আঘাতের পরও এবার আমনের বাম্পার ফলনের সুবাস পাচ্ছেন কৃষকরা।
 
অনেক জমির মালিক জানান, ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে তাদের।
রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. ফরিদুজ্জান বাংলানিউজকে বলেন, রূপসা উপজেলায় ৩ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়। ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে এ উপজেলায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক পংকজ কান্তি মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, এবার আমনের ফলন ভালো হয়েছে। খুলনা জেলায় প্রায় ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৯
এমআরএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।