চাঁদপুর: চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মৎস্য আহরণ ও কৃষিকাজ। এর মধ্যে শীত মৌসুমে পদ্মা-মেঘনায় মাছ কম থাকায় এ সময়ে অনেকেই হোগলা পাতা, নল, ঝাডি কাটা ও পরিবহনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
দুই থেকে তিন মাস এসব পাতা ও নল বিক্রি হলেও চরাঞ্চলের মানুষের আয়-রোজগারে বেশ ভূমিকা রাখে। কারণ মেঘনার পশ্চিম পাড়ের লোকদের অন্য কোনো কাজ করার সুযোগ খুবই কম। ট্রলারে করে নদী পার হতেই দিনের বড় একটা সময় চলে যায়। বাধ্য হয়ে চরাঞ্চলেই তাদের কাজ করতে হয়।
সদর ও হাইমচর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর, ইব্রাহীমপুর ইউনিয়ন এবং হাইমচর উপজেলার গাজীপুর, চরভৈরবী, নীলকমল ও হাইমচর ইউনিয়নে প্রায় ২০টিরও বেশি চরাঞ্চল রয়েছে। এসব এলাকার অধিকাংশ লোকই মৎস্য ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দুই উপজেলায় তালিকাভুক্ত জেলে রয়েছে ৩০ হাজারে বেশি।
সরেজমিন হাইমচর উপজেলার উত্তর আলগী, দক্ষিণ আলগী, গাজীপুর ও চরভৈরীব এলাকায় মেঘনা নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে- চরাঞ্চল থেকে ট্রলারে করে কৃষকরা হোগলা পাতা, নল ও ঝাডি নিয়ে আসছেন। পাড়ে নিয়ে আসার পরে স্তুপ করে রাখা এগুলো আঁটি বাঁধার কাজ করেন নারী, পুরুষ ও শিশুরা। এখান থেকে পাইকার ও স্থানীয় কৃষকরা তাদের প্রয়োজনীয় নল, ঝাডি ও হোগলা কিনে নিচ্ছেন।
হাইমচর উপজেলার উত্তর আলগী ইউনিয়নের বাসিন্দা সুমন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, শীত মৌসুমে হোগলা পাতা বেশি বিক্রি হয়। চরাঞ্চলের লোকজন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হোগলা পাতা কেটে ট্রলার বোঝাই করে মেঘনা পাড়ি দেয়। বিকেলে উপজেলার মেঘনা উপকুলীয় এলাকা কাটাখালি, হাইমচর, চরভাঙা ও চরভৈরবী এলাকায় বিক্রি করেন সেগুলো।
একই ইউনিয়নের মহজমপুর গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন ও চরভাঙা গ্রামের কৃষক মফিজ মিজি বাংলানিউজকে বলেন, শুধুমাত্র শীত মৌসুমে চরাঞ্চল থেকে আসা হোগলা পাতা, নল ও ঝাডি বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৮০ পিস নল বিক্রি হয় ১৫০ টাকা, এক আঁটি ঝাডি বিক্রি হয় ১৫ টাকা ও হোগলা পাতা প্রতি আঁটি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
তিনি আরো বলেন, নলগুলো কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে টমেটো আবাদ করার জন্য নল ব্যবহৃত হয়। ঝাডিগুলো ব্যবহার হয় পানের বরজে এবং হোগলা পাতাগুলো উপজেলার চরভৈরবী, দক্ষিণ চরকৃষ্ণপুর ও হাইমচর এলাকায় নারীরা পাটি তৈরি করে বিক্রি করেন। স্থানীয়ভাবে হোগলা পাতার পাটি বিক্রি হয় এবং অন্যান্য জেলার লোকজনও পাইকারি কিনে নিয়ে যান। প্রতি পিস পাটি বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলার প্রত্যেকটি চরাঞ্চলের মাটি খুবই উর্বর। এখানে উৎপাদিত প্রত্যেকটি জিনিস অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখে। এই অঞ্চলের কৃষকদের আধুনিক কৃষিকাজে উৎসাহ দেওয়ার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তারা বছর জুড়ে কোনো কোনো কাজে ব্যস্ত থাকেন। চরাঞ্চলের নল কৃষিকাজে, ঝাডি পানের বরজে বেশি কাজে লাগে। তবে সরকার মেঘনার পশ্চিমের চরে অর্থনৈতিক জোন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২১
আরএ